
ছবি: সংগৃহীত
আমরা জীবনের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কর্মস্থলে বেশি মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। সহকর্মীরা আমাদের দৈনন্দিন রুটিন,হতাশা এবং ছোট ছোট সাফল্যের সঙ্গী হন, যা কর্মস্থলকে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার একটি স্বাভাবিক ক্ষেত্র করে তোলে। গবেষণা বলছে, কর্মস্থলের সম্পর্ক কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি, সহযোগিতা এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মস্থলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকলে কর্মীরা বেশি উৎসাহী এবং স্থিতিস্থাপক হন। হার্ভার্ড গ্রান্ট স্টাডির মতো দীর্ঘমেয়াদি গবেষণাও বলছে, অর্থের চেয়ে অর্থবহ সম্পর্কই দীর্ঘমেয়াদি সুখের প্রধান পূর্বাভাস।
কিন্তু বিষয়টি কি একেবারে সুবিধাজনক?
যখন সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে
বন্ধুত্ব কর্মস্থলকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে, তবে এতে কিছু লুকানো ঝুঁকিও থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পক্ষপাতিত্ব। যখন ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে পেশাদার সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়, তখন তা কাজের ন্যায্য পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে। গবেষণা বলছে,কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব কখনো কখনো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে যোগ্যতা নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কই সুযোগ-সুবিধা, পদোন্নতি এবং স্বীকৃতির মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়।
আরেকটি জটিলতা হলো কৌশল ও আন্তরিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা। আমাদের প্রায়ই ক্যারিয়ারের অগ্রগতির জন্য "নেটওয়ার্কিং" করতে বলা হয়। কিন্তু কবে এই কৌশলগত নেটওয়ার্কিং স্বার্থান্বেষী সম্পর্ক হয়ে ওঠে? গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত সামাজিকতা কর্মক্ষেত্রে মানসিক ক্লান্তি ও পেশাদারিত্বের সীমারেখা ধূসর করে তুলতে পারে।
এছাড়া, অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের "পরিবার" হিসেবে উপস্থাপন করে। এই বার্তাটি উষ্ণ ও স্বস্তিদায়ক মনে হলেও, এটি বেশ সমস্যাযুক্ত হতে পারে। পরিবার নিঃশর্ত ভালোবাসা ও যত্ন দেয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠান এরকম নয়। গবেষকরা সতর্ক করেছেন, যখন কোনো সংস্থা নিজেদের "পরিবার" হিসেবে প্রচার করে, তখন কর্মীরা নিজেদের স্বার্থের চেয়ে কোম্পানির চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হন, যা ক্লান্তি এবং আত্ম-শোষণের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সমাধান কী?
কর্মস্থলের বন্ধুত্বের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে একটি নৈতিক কাঠামো প্রয়োজন। অনেক সংস্থার স্বার্থের সংঘাত এড়াতে নীতিমালা রয়েছে, তবে ব্যক্তিগতভাবেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। এখানে তিনটি কৌশল উল্লেখ করা হলো:
যে সহকর্মীরা আপনার ওপর ক্ষমতা রাখেন না (বা যাদের ওপর আপনি ক্ষমতা রাখেন না), তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। এতে স্বার্থের সংঘাত এড়ানো সহজ হয় এবং পেশাদারিত্ব অক্ষুন্ন থাকে।
কর্মস্থলে বন্ধুত্বকে পেশাদার সীমার মধ্যে রাখুন। বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও সহযোগিতা কাজের সৃজনশীলতা বাড়ায়, তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব না ফেলে, সেদিকে সতর্ক থাকুন।
কর্মস্থলকে পরিবার ভাবার ফাঁদে পা দেবেন না। ভালো কর্মস্থল সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত করে, কিন্তু এটি কখনো প্রকৃত পরিবার বা বন্ধুত্বের বিকল্প হতে পারে না।
সর্বোপরি, মূল বিষয় হলো ভারসাম্য রক্ষা করা। কর্মস্থলে বন্ধুত্বের ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করুন, তবে এর ঝুঁকিগুলোও মাথায় রাখুন। এভাবেই আমরা এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব, যা আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে—একটি আরেকটির সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে।
ফয়সাল