
ছবি: সংগৃহীত।
নাহিদ হাসান জয়। ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বাজিমাত করেছেন ১৭শ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ পদে নিয়োগ পরীক্ষায়। সারাদেশে উত্তীর্ণ ১০২ জনের মধ্যে হয়েছেন ৩৪ তম। কাকতালীয়ভাবে স্নাতোকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার ভাইভার দিনই বিকেলে ফল হাতে পেয়েছেন। শিক্ষাজীবন শেষে বেকারের ঝুলিতে নাম ওঠার আগেই সফলতার ঝুড়ি ভারী হয়েছে। তার এই সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন জনকণ্ঠের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা আজাহারুল ইসলাম।
জনকণ্ঠ: ১৭শ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে উত্তীর্ণ হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। আপনার জন্ম ও শৈশবকাল সম্পর্কে জানতে চাই।
জয়: আমার বেড়া ওঠা নাটোর জেলার লালপুর থানার অন্তর্গত ধনঞ্জয়পাড়া গ্রামে। শৈশবেই ২০০৫ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে পিতাকে হারায়। আমরা ৩ ভাই। আমিই সবার ছোট। প্রাথমিক বিদ্যালয় জীবন শুরু করেছিলাম করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালপুর, নাটোর। এরপর মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি ২০১৬ সালে করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, লালপুর, নাটোর থেকে। এবং উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি ২০১৮ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ, নাটোর থেকে।
জনকণ্ঠ: উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
জয়: প্রথমেই মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। কুরআনের সেই আয়াত মনে পড়ে যায় যে শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত বেশি দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ২০১৮-২০১৯ সেশনে ল' এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির পর থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল একদিন বিচারক হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। পরিবারও আমাকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। পাশাপাশি উৎসাহিত হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-আপুদের সুপারিশপ্রাপ্ত হতে দেখে এবং তাদের অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলোও আমাকে উৎসাহিত করেছে। শিক্ষকদের জ্ঞানগর্ভ কথাগুলোও আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
জনকণ্ঠ: পড়াশোনা কবে থেকে শুরু করেছিলেন? অ্যাকাডেমিক ফলাফল কেমন?
জয়: আমি প্রথম বর্ষ থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশুনা ভালোভাবে করেছি। কিন্তু বিজেএসের প্রিপারেশন শুরু করেছি তৃতীয় বর্ষ থেকে। প্রথম ৩ বছর আমি ডিপার্টমেন্টে প্রথম, দ্বিতীয়-র মধ্যেই থাকতাম। পরবর্তীতে জুডিশিয়ারির দিকে ফোকাস করতে গিয়ে ডিপার্টমেন্টের চূড়ান্ত রেজাল্টে আমি ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় হই।
জনকণ্ঠ: আপনার অ্যাকাডেমিক ফলাফলও তো দুর্দান্ত। এর সাথে জুডিশিয়ারির পড়া কীভাবে সামলে নিয়েছিলেন?
জয়: ডিপার্টমেন্টের কিছু কোর্সের সাথে জুডিশিয়ারির সিলেবাসের মিল থাকে এই কোর্সগুলো আমি খুব ভালোভাবে পড়াশুনা করতাম। আর ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করতাম প্রতিনিয়ত।
জনকণ্ঠ: বিচারক হওয়ার স্বপ্ন কখন ছিল?
জয়: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে (২০১৮-২০১৯) সেশনে ল' এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির পর থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল যে একদিন বিচারক হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো।
জনকণ্ঠ: সফলতার পেছনে কার সবচেয়ে অবদান বেশি?
জয়: এ যাত্রায় শিক্ষকদের পাশাপাশি পরামর্শক হিসেবে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি জনাব সাকিব আহমেদ ইমন ভাই (সহকারী জজ ১৫'শ বিজেএস) এবং আমার বিভাগের প্রথম ব্যাচের আসাদুজ্জামান নুর ভাই (সহকারী জজ ১৬'শ বিজেএস) এর নিকট থেকে। এছাড়া আমার বড় ভাই, খুব কাছের বন্ধু সকলেই আমাকে সহযোগিতা এবং অনুপ্রাণিত করেছেন।
জনকণ্ঠ: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং কত সময় করে পড়াশোনা করেছেন?
জয়: প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম জেনারেল অংশ দিয়ে। আমার মনে হয় গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক অংশে খুব সুন্দর একটা মার্কস পেলে এ যাত্রায় ভালো ফলাফল করাটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে। আমি ধারাবাহিক ভাবে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়াশুনা করে গেছি।
জনকণ্ঠ: কত বার ভাইভা দিয়েছেন এবং কততম ভাইভাতে সফল হয়েছেন?
জয়: এটাই আমার প্রথম জুডিশিয়ারি এবং চাকরির পরীক্ষা। আমার অনার্স চূড়ান্ত রেজাল্টের মধ্যেই সার্কুলারটা পেয়েছিলাম এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি এবং অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। যেদিন ভাইভা ছিল সেদিন বিকেলেই ফলাফল হাতে পাই।
জনকণ্ঠ: ভাইভার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জয়: ভাইভা অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো রিটেনে খুব ভালো একটা মার্কস থাকলে ভাইভাতে ২-১টি প্রশ্নের উত্তর সঠিক জানা না থাকলেও এটা কোনো নেগেটিভ প্রভাব ফেলে না। ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর পারতে হবে এমন আমার কাছে মনে হয়নি। যেটা পারবেন না সেটা সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে স্যরি বলা যেতে পারে। বিচারকরা অনেক সময় আপনার নার্ভ পরীক্ষা করতে পারেন সেটাও আপনাকে বিনয়ের সাথেই মোকাবিলা করতে হবে। Lord Denning এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি আমাদের মনে রাখতে হবে "one thing a judge must never do, he must never lost his temper."
জনকণ্ঠ: উত্তীর্ণ হওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন?
জয়: কিছু অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার যায় না। সব থেকে বড় অনুভূতি হলো, ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার মাস্টার্স ভাইভা সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে আমার অ্যাকাডেমিক জীবনের ইতি ঘটলো এবং কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই জুডিশিয়ারির চূড়ান্ত ফলাফলের সুসংবাদটি এলো। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সম্মানের সাথে আমি আমার অ্যাকাডেমিক জীবন সমাপ্ত করতে পারলাম।
জনকণ্ঠ: যারা বিচারক হতে চাই তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
জয়: নতুনদের জন্য পরামর্শ হলো যাদের জুডিশিয়ারির ইচ্ছে আছে তাদের লেখার মান বাড়াতে হবে। খাতার পেজের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করে যেতে হবে।
জনকণ্ঠ: বিচারক হিসেবে দেশের জন্য আপনি কী অবদান রাখতে চান?
জয়: ভবিষ্যতে আমি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের আস্থার সর্বশেষ জায়গা হলো বিচার বিভাগ, আমি বিচার বিভাগের সেই সম্মানে অবদান রাখতে চাই।
জনকণ্ঠ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা আপনার জন্য।
জয়: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
সায়মা ইসলাম