
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) সম্প্রতি প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এই ঘটনা ‘কল্পনার বাইরে’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এতে তিনি ‘মর্মাহত হয়েছেন’ জানিয়ে শিগগির ঘটনার ‘প্রতিকার’ করা জরুরি বলেও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দেখলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীর নামে করা ভবন ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও কয়েকজনের নামে করা স্থাপনার নামও বদলানো হয়েছে। কেন এটি করা হলো? এটা খুব দুঃখজনক। আমি এ কাজে মর্মাহত হয়েছি।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে করা ভবনের নাম যে এভাবে পাল্টানো হবে, সেটা তো কল্পনার বাইরের বিষয়। আমি আশা করবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা মিলে শিগগির এর প্রতিকার করবে।’
গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের স্বার্থে জীবনবাজি রেখে লড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকের ধারণা ছিল যে প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শুধু নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই চিন্তা করে, তাদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা কাজ করে না। তবে আমরা সাম্প্রতিক যে গণঅভ্যুত্থান দেখেছি, সেখানে ব্র্যাকসহ বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে জীবনবাজি রেখে এগিয়ে এসেছিলেন, তাতে সবার ভুল ভেঙে গেছে।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তোমরা যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করছো, ক্যারিয়ারের প্রতি যত্নবান হবে। সমাজের জন্যেও কিছু করতে হবে। সমাজে জন্য কিছু করা অর্থ কী? আমরা যে যাই করি না কেন, আমরা যদি সবক্ষেত্রেই নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সৎভাবে পালন করি, তবেই সেটা সমাজের জন্য কিছু করা হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আর্থিক বিবেচনায় আপনারা পেশা বেছে নেবেন না। বরং আপনার যে কাজটি করতে ভালো লাগে, সেরকম পেশা বেছে নেওয়া উচিত। আমরা এমন সমাজে বাঁচতে চাই, যেখানে সৎভাবে বুক উঁচু করে বাঁচা যায়। সে পথে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষার প্রসার হলেও মানের অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষায় অনেক কিছুই হয়েছে। অনেক প্রসার হয়েছে। তবে এর মানের ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। সভ্যতার পথ ধরে এগোতে গেলে প্রযুক্তি লাগবে। তবে নৈতিকতা ছাড়া সভ্য হওয়া যাবে না।
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অস্কার জয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক শারমিন ওবায়েদ চিনয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।
সমাবর্তনে ভেলিডিক্টোরিয়ান বক্তব্য দেন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী শিহাব মুহতাসিম ও সমাপনী বক্তব্য দেন সমাবর্তন কমিটির কো-চেয়ার ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপারসন ড. সাদিয়া হামিদ কাজী।
এবারের সমাবর্তনে চার হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুজনকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক এবং ২৮ জনকে ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
কাজল/ রাজু