ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

রাবিতে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি ছাত্র শিবির

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২২:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাবিতে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি ছাত্র শিবির

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) 'মেধাবীদের মুখোমুখি ছাত্রশিবির' শীর্ষক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্র শিবির। 

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এ প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানের মুখোমুখি হন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও শাখা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এসময় মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান নিয়ে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। তাদের কতগুলো চাহিদা ছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ১২ বছর এক্সহিল গণতান্ত্রিক পাকিস্তান। এ সময় কোনো সমস্যা হয়নি। পরের এগারো বছরে ছিল সেনা শাসন। এ সময় ছিল পাকিস্তানের কলঙ্কজনক অধ্যায়। যার প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় জায়গাতেই পড়েছে। এটা সে সময়ের শাসকের অযোগ্যতা ও অথর্বতার প্রমাণ। মানুষের কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না। এর জন্যই মানুষ লড়াই করেছিল। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছে। তবে, তাদের ক্ষমতা দেয়নি। ১৯৭১ এ শেখ মুজিব কখনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি। তিনি জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান বলে তার বক্তব্য শেষ করেছিল। তিনি এত বিশাল পাকিস্তান রেখে এত ছোট বাংলাদেশের শাসন চায়নি। তবুও এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপামর জনতা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে।

অনুষ্ঠানে বিগত দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'শাহবাগী গোসল কর' ব্যাপক ভাইরাল স্লোগান সম্পর্কে সাদ্দাম বলেন, "শাহবাগী গোসল কর' শব্দগুচ্ছটি ছিল আয়রনি। বাংলাদেশে শাহবাগ থেকেই ফ্যাসিবাদ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উত্থান হয়েছিল। তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তখন সরকার আইন সংশোধন করে বিচার প্রক্রিয়া না মেনে নতুন আইনে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়েছিল। শাহবাগীদের এ দাবিই ছিল সরকারের মূল চালিকাশক্তি। এভাবেই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুরু হয়েছিল। এরাই শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে, মাথা খেয়ে স্টারে পরিণত করেছিল যেমনিভাবে শেখ মুজিবকে বাকশাল কায়েমে বাধ্য করেছিল। আমরা এ জন্য আয়রনি দিয়ে বুঝিয়েছি নতুন বাংলাদেশ পরিশুদ্ধভাবে রাজনীতি করতে হবে।"

জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ভূমিকা প্রশ্নের উত্তরে নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, এ আন্দোলন ছিল ছাত্র জনতার আন্দোলন। এ আন্দোলনের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বশীলেরা যুক্ত ছিল। ইন্টারনেট ব্লাক আউটের সময়ে আহতদের চিকিৎসা, গ্রেফতারকৃতদের কোর্টে সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ দেশব্যাপী পরিচালনা করা আন্দোলনের নেতাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এর ভেতরেই সমন্বয়কদের গ্রেফতার করে দাবি মানিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা আন্দোলনের অংশীজনের সাথে আলোচনা করে ৯ দফা প্রণয়ন করি। এর মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিও ছিল। এ ছাড়াও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা বাদেও স্থান নির্ধারণ, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, আন্দোলনে লাঠিসোঁটা নিয়ে ডিফেন্স দেওয়ার কাজ অর্গানাইজে সাহায্য করেছে ছাত্র শিবির। 

ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রশ্নে রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, 'ছাত্র শিবির ৫ দফায় ৩১টা বিভিন্ন শাখার আওতায় আমরা অর্থাভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের খোঁজ পেলে সাবেক ভাই ও শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে তাদের সহায়তা করেছি। এ ছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।'

কর্মসূচিতে নারী শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি বিষয়ে জানতে চাওয়া এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নে রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, 'আজকের কর্মসূচিতে না আসলে হলে ফিরে খবর আছে এমন বার্তা ছাত্র শিবির কাউকে দেয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ছাত্র শিবির কাউকে বাধ্যও করে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রচার করেছি। কিন্তু আমাদের বোনেরা আসেনি। আমাদের বোনেদের হয়ত লজ্জাবোধের কারণে হতে পারে। তবে, কিছুদিন আগের কোরআন শরিফ বিতরণ কর্মসূচিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বেশি ছিল।

কর্মসূচিতে শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সালের সঞ্চালনায় এ সময় শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

লুবনা/সজিব

×