ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে 'তিতুমীর ঐক্যে'র ব্যানারে ২৯ জানুয়ারি দুপুর থেকে অনশন শুরু করেছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে কয়েকজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদধারী নেতাও রয়েছেন। তারাই মূলত আন্দোলনে নেতৃত্ব ও ইন্ধন দিচ্ছে। তাদেরকে পিছন থেকে শেল্টার ও ইন্ধন দিচ্ছে লীগ নেতারা।
নগরবাসীকে অতিষ্ঠ করে তোলা তিতুমীরের এই আন্দোলনকে অনেকেই অযৌক্তিক হিসেবে দাবি করছেন। দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী অন্যায্য এই আন্দোলনের পেছনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ইন্ধন থাকার বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল। কিন্তু এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে ঢাকাকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। তারা গোয়েন্দা ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করে বলছেন, যে গোয়েন্দা সংস্থা ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিত তারা কেন এখন আগাম তথ্য উদঘাটন করতে পারছেন না। তাদের এই রহস্যজনক ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সর্মথকেরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে আন্দোলনের পন্থা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হচ্ছে। একটি পক্ষ আন্দোলন করতে চাইলেও রাস্তা বন্ধের পক্ষে নেই। আবার অন্য পক্ষ রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করতে ইচ্ছুক।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের রিপন, জুয়েল, সাইফুল, ইব্রাহীম, সানিসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী শেলটার দিচ্ছেন। পাশাপাশি তারা এ কাজে ছাত্রলীগ নেতা মির্জা রাকিব, সুজন, জাহিদ, মো. বেলাল আহমেদ তালুকদার, মাহফুজ, সাবের হোসেন, সোহান, রাসেলসহ বেশ কয়েকজনকে সহযোগিতা করছেন।
https://www.rupalibangladesh.com/special-report/32783
আন্দোলনে সামনের দিকে সক্রিয় একজনের নাম রাকিব মিয়া। সে সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক। আরেকজনের নাম তাহসান হাসান সোহান। সে ছাত্রলীগের সরকারি তিতুমীর কলেজের সহ-সম্পাদক। আর একজন ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছে যার নাম আলি আহম্মেদ।
https://www.facebook.com/photo/?fbid=122119708958619453
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।ফলে সাধারণ মানুষ ও দেশের সচেতন মহল মনে করছে- তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছে নাকি এর নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। তাই এ বিষয়ে সরকারের অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত বলে জানান তারা।
এরআগে গেল নভেম্বরে তিতুমীরের সহিংস আন্দোলনে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে। বিষয়টি নিয়ে তখনও সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয়েছে সমালোচনা। কর্মসূচিতে অংশ নেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বনানী থানার সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. বেলাল আহমেদ তালুকদার।
বেলাল আহমেদের ফেসবুকে প্রোফাইলে দেখা যায় আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট। এছাড়াও আজকের অবরোধে তার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক লাইভ করতে দেখা যায়।
https://thedailycampus.com/public-university/160353/
এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবিতে যে আন্দোলন, তাতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে এবং সরকারেরও নাভিশ্বাস অবস্থা।মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ সুষ্ঠুভাবে উদযাযাপনের লক্ষ্যে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তো লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। দিনের পর দিন কিন্তু তাদের এ দাবি-দাওয়া বেড়েই চলছে। এটার পেছনে কারা জড়িত সেটাও কিন্তু আপনারা জানেন, এটা কিন্তু আপনারা (সাংবাদিক) প্রকাশ করেন না।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়।
তবে এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবারও ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
একইসঙ্গে মহাখালী এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেললাইন অবরোধ করায় সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব
সাজিদ