জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একটি মণ্ডপে এবারও বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর পূজার পৌরহিত্য করেছেন এক নারী পুরোহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিকের পরিচালনায় বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে সরস্বতীর আরাধনা করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। এটি দ্বিতীয়বারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পূজায় কোনো নারী পুরোহিতের পৌরোহিত্য।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই বিভাগের পূজা-অর্চনা পরিচালনা করলেন তিনি।
হিন্দু ধর্মে নারীরা সাধারণত পূজার আনুষঙ্গিক কাজে অংশ নিলেও পৌরোহিত্য সাধারণত ব্রাহ্মণ পুরুষদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। তবে সমাদৃতা ভৌমিক মনে করেন, সনাতন শাস্ত্রে কোথাও বলা নেই যে নারী পুরোহিত পূজা পরিচালনা করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, শাস্ত্রমতে নারীদের পৌরোহিত্য করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সামাজিক জড়তার কারণে নারীরা পূজার কার্যক্রম পরিচালনার উৎসাহ পান না। তাদের এই জড়তা কাটাতেই দ্বিতীয়বারের মতো আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সমাদৃতা ভৌমিক বলেন, “আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা যে মেয়েরা পূজার আয়োজন করতে পারে না। এই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতেই আমি নিজ উদ্যোগে পূজা পরিচালনা করেছি।”
বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “জ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনো বিভেদ নেই। সেক্ষেত্রে পূজার ক্ষেত্রেও লিঙ্গভিত্তিক ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। শাস্ত্রেও কোথাও বলা নেই যে নারীরা পূজা পরিচালনা করতে পারবেন না।”
সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা জানান, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সরস্বতীকে "বীণাপাণি" বলা হয়, কারণ তার হাতে থাকে বীণা। তার বাহন সাদা রাজহাঁস।
ঐতিহ্য অনুযায়ী, এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শিশুদের বিদ্যার হাতে খড়ি দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭টি মণ্ডপে সরস্বতী পূজা হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগ পূজা উদ্যাপন করছে। এবার ৩৩টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউট, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং চারুকলা অনুষদের তিনটি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পূজা উপলক্ষে ক্যাম্পাস রঙিন হয়ে উঠেছে আলপনা ও আলোকসজ্জায়। শান্ত চত্বর, শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচতলা, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগের মণ্ডপ সাজিয়েছেন।
দিয়া চৌধুরী বলেন, আয়োজন উপভোগ করছি, তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় উৎসবের মাত্রা কিছুটা কম। বাজেটও তুলনামূলক কম ছিল, তাই আমরা সম্পূর্ণ ডেকোরেশন পাতা দিয়ে করেছি।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কিছু ঘটনা সামনে এসেছে, তবে আমরা এ বিষয়ে সচেতন এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পূজার এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসাহ ও সংস্কৃতি চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আশিক