ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

অভিভাবকহীনতায় ঝুলছে সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর ভাগ্য!

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অভিভাবকহীনতায় ঝুলছে সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর ভাগ্য!

ছবি : সংগৃহীত

বিগত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে আসছে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ, গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত সোমবার অধিভুক্তি বাতিল করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, চলতি বছর থেকে ঢাবির আওতায় আর ভর্তি পরীক্ষা হবে না বলে জানান ঢাবি উপাচার্য। এতে উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তির রেখা ফুটে উঠেছে। তবে, অধিভুক্ত বাতিল হলেও সামনে কোন প্রক্রিয়ায় চলবে সাত কলেজের ভর্তিপ্রক্রিয়া, পাঠদান ও একাডেমিক কার্যক্রম তা নিয়ে নতুন শঙ্কা দেখা গেছে। 

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (২৮ জানুৃয়ারি) শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সাত কলেজ নিয়ে) যে ঘোষণা দিয়েছে, তা আমার সঙ্গে আলোচনা করে হয়নি। তাদের (সাত কলেজের) এ বছর থেকেই ভর্তি নেওয়া হবে না, এর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। ঢাবির অধীনে সাত সরকারি কলেজের ভর্তি এ বছরই বন্ধের সিদ্ধান্তে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সাত কলেজকে নিয়ে একটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কাঠামো তৈরির মডেল নিয়ে কাজ করছিল, কারণ এই সংকট দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই দুঃখজনক। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির নতুন মডেল নিয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তবে বিষয়টি জটিল।

এমন পরিস্থিতিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সাথে কোনো আলোচনায় বসেনি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সাথে কোনো কথা বলেনি। আবার এখানে ইউজিসির ভূমিকা রাখার সুযোগ ও কম। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলে ১৯৭৩ সালের  আদেশ অনুযায়ী। 

এ নিয়ে বাঙলা কলেজ শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বর্তমানে আমরা দ্বিধাদন্দ্বে আছি। সাত কলেজ নিয়ে আমরা স্পষ্ট নয় তবে শিক্ষা মন্ত্রালয় ও ইউজিসি মিলে সুন্দর একটা সমাধান করবে বলে আশা করি। প্রায় দুই লক্ষ শিক্ষার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে এখানে। আমরা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপরেখা চায়।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস জনকণ্ঠকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নতুন করে আর শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না। তবে বিদ্যমান শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবেই থাকবে। প্রথম বর্ষের ভর্তিকার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। সাত কলেজে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে আশা করি সরকার দ্রুত সমাধান করবেন। আর যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবে পরিচালিত হবে এ সাত কলেজ।”

ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামছুন নাহার বলেন, “আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়টি অবগত করেছি। হঠাৎ অধিভুক্তি বাতিলের পর কী করতে হবে এমন প্রস্তুতি তো আমাদের নেওয়া ছিল না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই চলব আমরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ কলেজগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হবে কি না, এমন কোনো আলোচনাও জানতে পারিনি। হঠাৎ অধিভুক্তি বাতিল হওয়ার পর নতুন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া আসলে সময়সাপেক্ষ। সবার জন্য সুবিধাজনক ও মঙ্গলজনক হবে এমন সিদ্ধান্তই সরকার নেবে বলে প্রত্যাশা করছি।”

সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সাত কলেজ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত জানাবে তা মেনে নেব। বর্তমানে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের মৌসুম। আশা করি সরকার খুব দ্রুত এ বিষয়টি সমাধান করবে।”

মো. মহিউদ্দিন

×