বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও রংপুর মহানগরীর জিয়া সাইবার ফোর্সের সিনিয়র সাধারন সম্পাদক ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফি।এক বছর পূর্বে পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তিনি জুলাই আগস্ট এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় তার শাস্তি মওকুফের তোড়জোড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবং বেকায়দায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে এ সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সূত্র জানায়, ইউজিসির নিয়ম লঙ্গন করে সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিউল ইসলাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়ত্বি গ্রহন করইে জুলাই আগস্টের আন্দোলনের দোহাই দিয়ে ছাত্রদল নেতার নকলের শাস্তি বাতিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারন শিক্ষার্থীরা ।
১৩ জানুয়ারীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড.মো.তানজিউল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনি (রিফাত হোসেন) ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা (মানোন্নয়ন)-২০২৩ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর বিদ্যমান শৃঙ্খলা বিষয়ক বিধি ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে 'পরীক্ষায় অসদুপায় ও শান্তিমূলক ব্যবস্থা বিধিমালা-২০১৮' এর ৪ ব্যাখ্যা (খ) উপবিধি অনুযায়ী মানোন্নয়ন পরীক্ষা ও অধ্যয়নরত সেমিস্টারের কন্টিনিউয়াস এসেসমেন্টসহ সেমিস্টার ফাইনালের সকল কোর্সের পরীক্ষা বাতিল এবং পরবর্তী ব্যাচের (Next available batch) সঙ্গে বাতিলকৃত সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে পারবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীতে আপনি শাস্তি মওকুফের আবেদন করায় জুলাই/আগস্ট এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় আপনার শান্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, এ সুযোগ শুধুমাত্র একবারের জন্য বিবেচিত হবে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, গত ২৫.০২.২০২৪ তারিখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ সেশনের ২০২৩ সালের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা (মানোন্নয়ন) PHY 1101 (Engg. Physics) বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী মো: রিফাত হোসেন রাফি, আইডি: ১২০১৬০৫৩; রেজি, নম্বর: ০০০০১৪৮৬৮, সেশন ২০২০-২০২১ (পুনঃভর্তি ২০২১-২০২২) বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর মোবাইলের ধারনকৃত ইমেজ থেকে মূল উত্তরপত্রে লেখার সময় কক্ষ পরিদর্শক এর নিকট ধরা পড়েন।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রধান পরিদর্শক শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে প্রেরণ করেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলে শিক্ষার্থী তার জবাব প্রদান করেন।
আরও জানা যায়, রিফাতের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়াদির উপর কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার জবাবপত্রসহ যাবতীয় দলিলাদি বিভাগের নিকট প্রেরণ করা হয়। এছাড়া তার জব্দকৃত মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে সংরক্ষিত রাখা হয়৷
শাস্তি মওকুফের বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। | আজিজুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন,EEE ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষকদের বলতে চাই, রওনক নামের আরেক ছাত্র যার গুলি লাগছিলো, তাকে কেনো শাস্তি কমানো হলো না?
আরমান নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, চেতনা বিক্রি করে খাই।অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে,কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে।
ওয়াকিব নামে আর এক শিক্ষার্থী মন্তব্যে লিখেন,কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আবার আন্দোলনের কোটা দিয়ে শাস্তি মওকুফ ।এই হিসেব করলে তো যারা আনদোলনে আহত হয়েছে তাদেরকে সিজিপিএ ৪.০০ দেওয়া লাগে।৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবার পুনর্বহাল চাই।বেরোবির প্রশাসন মানেই তামাশা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ১ বছর পূর্বে পরীক্ষায় মোবাইল নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কার হয়েছে, এখন জুলাই অভ্যুত্থানের দোহাই এবং দলীয় প্রভাব দেখিয়ে মওকুফ পাওয়া ও পূণরায় পরিক্ষা নেয়ার বিষয়টি জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার সাথে প্রতারণার সামিল। প্রশাসনের এমন হটকারি সিন্ধান্তের নিন্দা জানাই এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়ার জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফি বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমার কাছে মোবাইল পাওয়ায় তৎকালীন সময় আওয়ামী লীগের দোসরা আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি ছাত্রদল করায় আমার উপরে আরো বেশি চওড়া হয়েছে। সেজন্য আমি শৃঙ্খলা বোর্ডে আবেদন করি। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে সেটি আমি উল্লেখ করি। জুলাই আগস্ট বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি আহত শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করেছি। সে হিসেবে তারা বিবেচনা করেছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো.ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি এখনো ফাইনাল নয়। শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিলেও এইটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন পেলে তারপর সে পরীক্ষায় বসতে পারবে। এক বছর পূর্বে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী কিভাবে জুলাই আগস্ট বিবেচনায় শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সে জুলাই বিপ্লবের আহত শিক্ষার্থী সে হিসেবে এটি বিবেচনা করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড.মো.তানজিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এখনো একাডেমি কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন বাকি আছে। আর চিঠিতে ভাষাগত কিছু ভুল রয়েছে রবিবার সেটি ঠিক করে পুনরায় দেওয়া হবে ৃ
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো:শওকাত আলী বলেন,বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। ।সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হবে তারপর বিষয় টি জানানো হবে।
আফরোজা