ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

১২৩ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি

পাঠ্যবইয়ে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বয়ান-ইতিহাস বিকৃতি বহাল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

পাঠ্যবইয়ে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বয়ান-ইতিহাস বিকৃতি বহাল

ছবি: সংগৃহীত।

চলতি শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বয়ান ও ইতিহাস বিকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে মনে করে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

সংগঠনটির দাবি, অবিলম্বে গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক বয়ান পাঠ্যবই থেকে বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে চব্বিশের ছাত্র-নাগরিক গণঅভ্যুত্থানের পরও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) যে বা যারা পাঠ্যবই পরিমার্জনের নামে আওয়ামী বয়ান প্রচারে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ইউট্যাব সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খানের সই করা বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে সই করেছেন দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৩ জন শিক্ষক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন ব্যবস্থা’ শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে গণহত্যাকারী ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসকারী আওয়ামী লীগকে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম দল হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। বইটির একই অধ্যায়ে বিএনপি সম্পর্কেও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সাবেক সেনাপ্রধান উল্লেখ করে জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে সামরিক শাসনামল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

‘বিতর্কের মুখে অনলাইন ভার্সনে এ বিষয়ে পরিবর্তন আনা হলেও অনেক মুদ্রিত বইয়ে আওয়ামী বয়ান বহাল রয়ে গেছে। আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সম্পৃক্ত অল্প বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।’

ইউট্যাব নেতারা বলেন, নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে ‘পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচারী সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। অভাবনীয় এক গণঅভ্যুত্থান দেখে সারা দুনিয়ার মানুষ।’ এখানে শেখ হাসিনা কিংবা তার দল আওয়ামী লীগের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তারা আরও বলেন, আমরা আরও লক্ষ্য করেছি, নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ‘সত্তরের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক ত্রয়োদশ অধ্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতারসহ নানা বিষয়ে আওয়ামী লীগকে নানাভাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছে। একই পাঠ্যবইয়ের ‘প্রাচীন বাংলার ইতিহাস’ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে বখতিয়ার খিলজিকে একজন ভাগ্যন্বেষী যোদ্ধা বলে উল্লেখ করে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় থেকে নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হলেও শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের বিশাল ছবিসহ উপস্থাপন করে প্রকারান্তরে আওয়ামী বয়ানকে সূক্ষ্মভাবে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত করে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এ অধ্যায়ে স্বাধীনতার ঘোষক এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত বিবরণও অর্ন্তভুক্ত করা যেতো।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, আমরা আরও সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, পাঠ্যপুস্তকে আওয়ামী বয়ান সন্নিবেশন করে ইতিহাসকে বিকৃত করার সঙ্গে জড়িত ও বিগত দেড় দশক ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ভূমিকা পালনকারী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) কর্মরত দোসরদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে ব্যর্থতার সঙ্গে ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এনসিটিবি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

নুসরাত

×