ছবি : সংগৃহীত
ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশী নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে ভারতীয় হাইকমিশনারকে অবিলম্বে তলব করে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য জবাবদিহি চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা',‘দালালি না আজাদি, আজাদী আজাদী', ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা কলেজের আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, ভারত যদি মনে করে ফেলানীর মতো হত্যাকান্ড করলে কোনো বিচার হবে না তাহলে আপনারা ভুল করছেন। ভারতীয় আগ্রাসনবাদীরা যদি মনে করে তারা এখনো তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমরা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, এখন থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে কিছু করতে গেলে ১০০ বার ভাববেন। আপনারা আগের ফ্যাসিস্টদের যে সহযোগিতা পেয়েছিলেন সেটা আর পাবেন না৷ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা হলে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিবো না৷
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডাকা হয়নি, এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কোনো জবাব চাওয়া হয়নি। আমরা চাই না আর নতজানু হয়ে চলতে৷ আমরা চাই নতজানু না হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। এর আগে আওয়ামীলীগ সরকার আমাদের স্বাধীনতা ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে দিতে চাই, আপনারা যদি নাজমা হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদক্ষেপ না নেন তাহলে জনগণ কিন্তু সেটা মেনে নেবে না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম বলেন, ভাযতের হাতে বাংলাদেশীদের খুন কোনো নতুন ঘটনা নয়। ভারত বাংলাদেশের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করে একের পর এক খুন করেই গেছে। অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তারা এই দেশকে করদরাজ্য বানিয়ে রেখেছিল। গত ৫৪ বছরে ভারতের আধিপত্যের কারণে যত খুন হয়েছে তার সবগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে ভারতের পক্ষে থেকে সন্ত্রাসী কাজ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভারত আন্তর্জাতিক মহল ও তাদের দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। তারা কখনো জুলাই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু ভারত সমর্থন না করলেও এদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ছিলো সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কিভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য দাঁড়াতে হয় বাংলাদেশের জনগণ সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। তারা নিজেদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। তারা শুধু উগ্রতাই ছড়িয়েছে। গতকাল ভারতে আমাদের বোন নাজমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উগ্রতা ছড়ানোর ফলাফল। ভারতের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনাদের আগ্রাসনবিরোধী কাজের নিন্দা আমরা করেছি। সামনেও আপনারা কোনরকম আগ্রাসী মনোভাব দেখালে আমরা আপনাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলবো। যতদিন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠতে না পারবে আমরা ততদিন পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, ভারতকে অবশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবশ্যই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইকমিশনারকে ডেকে জবাবদিহি করতে হবে। আগামীতে যেনো এমন কোন ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভারতকে হুঁশিয়ারি প্রদান করতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঈনুল ইসলাম, ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ, ঢাবি শিক্ষার্থী মোফাজ্জল হোসাইন সাদাত, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন মিতু, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিফতি প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।
মো. মহিউদ্দিন