এক মা গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির উঠানের কোণে মাটির একটা চুলায় মুড়ি ভাজছে। সংসারের জন্য সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরেও রাতে এই মুড়ি ভাজার কাজ করার সময় তার কোন বাড়তি পরিশ্রম বোধ হচ্ছে না। কারন পরিশ্রমের বাইরে মনে তার রয়েছে স্বপ্ন। মুড়ি ভাজার পর সেটা বিক্রির থেকে পাওয়া বাড়তি কয়টা টাকা দিতে পারলে মেয়ের একটি প্রাইভেটের মাসিক টাকা কিংবা এনজিও থেকে নেওয়া লোনের একটা কিস্তি দেওয়া সম্ভব হবে। এনজিওতে এই লোনটা নেওয়া হয়েছে আবার মেয়ের মেডিকেল কোচিং খরচ চালানোর জন্য। মেয়ে যে ডাক্তার হওয়ার কোচিং করছে।
স্বপ্ন দেখা এই মা ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন এর হাট গোবিন্দপুর গ্রামের অদম্য মেধাবী ছাত্রী প্রান্তি বিশ্বাসের মা চঞ্চলা রানী বিশ্বাস(৪২)।
প্রান্তি বিশ্বাস এবার ২০২৪-২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। প্রান্তির মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ৭৭। সর্বমোট স্কোর ১৭৭। তালিকায় সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রান্তি। বাবা কাঠমিস্ত্রী এর কাজ করে। নাম রমেন বিশ্বাস (৫২)। অভাবের সংসারে প্রান্তির বাবার একদিন কাজ থাকেতো ৩ দিন নাই। অভাবের সংসারে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাও বাতুলতা। তবু প্রান্তি স্বপ্ন দেখেছে বড় ডাক্তার হওয়ার। স্বপ্ন পুরনের প্রথম ধাপ পেরিয়েছে ভর্তি হওয়ায় যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন বাকিটুকু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে।
ছোটবেলা থেকেই প্রান্তি মেধাবী। সেই সাথে ফুটবলও খেলতো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার সময় স্কুল দলে খেলতেন। ছিলো চাঁদের হাট গার্লস ফুটবল একাডেমির সদস্য।একসময়কার তুখোড় মিডফিল্ডার ফরিদপুর জেলার মহিলা ফুটবল দলে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলে ফুটবল খেলেছেন। কিন্ত পরে পড়াশোনার ব্যস্তার কারনে ফুটবলের পাট চুকিয়ে পুরোদস্তুর ছাত্রী হয়েছেন। প্রান্তি জানান, পড়াশোনা আর খেলা একসাথে হয না তাই খেলাটা ছেড়ে পড়াটাকেই বেছে নিয়েছি।
প্রান্তিরা এক ভাই এক বোন। প্রান্তির বড় ভাই রাহুল বিশ্বাস (২৬) সিভিল ডিপ্লোমা করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রান্তি জানান ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে সদর উপজেলার কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছি। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকে আমাকে সহযোগিতা করেছে বিশেষ করে বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত স্যারের অবদান আমি কোনদিনই ভুলবো না। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় সকল শিক্ষক আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সময় কোনদিন কোন টাকা নেয়নি। এমনকি এইচএসসিতে পড়ার সময় আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত আমার ফরিদপুর শহরে মেসে থাকার যে খরচটাও হতো তা তিনি পুরোটাই প্রদান করতেন। এইচএসসি তে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের শিক্ষকরা আমার কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষেত্রে কোন টাকা চেয়ে নেননি। যখন যেটা পেরেছি সেটা দিয়েছি। এভাবেই আমি স্বপ্ন পুরনে এগিয়ে চলছি। প্রান্তি তার মায়ের ও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে সকলের দোয়া চেয়েছেন।
শিহাব