দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। দেশের বিভিন্ন ক্লান্তিলগ্নে কলেজগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গনঅভ্যুথানের পর দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন সেক্টরের সংস্কারের কথা উঠলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে রাজপথে নামেন। প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলনের পর অবশেষে আলোর মুখ দেখছেন শিক্ষার্থীরা। দেশের অনেক শিক্ষাবিদরাও তাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
সর্বশেষ, "সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তর" এর লক্ষ্যে চার সদস্যবিশিষ্ঠ কমিশনও গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রালয়। এদিকে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হলে ঢাকা কলেজ,ইডেন ও বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ এই তিন কলেজের পাঠদান প্রক্রিয়া কেমন হবে-তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। যেহেতু ঢাকা কলেজে শুধু ছেলে আর অন্যদিকে ইডেন ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে শুধু মেয়েরা পড়ে। শিক্ষার্থীদের কেউ বলছেন, বর্তমানে যেমন আছে তেমনই থাকুক আবার কেউ বলছেন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়ই থাকা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন কয়েকটি ক্যাম্পাস মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য উদাহরণ বহির্বিশ্বে রয়েছে। অন্যতম উদাহরণ University College London যার বিশ্ব রাংকিং "৯" বা কমবেশি। ৭ কলেজ এমনভাবে ছড়িয়ে যে পৃথিবীর কোনো একক মডেলই এখানে সহজে প্রয়োগ করা কঠিন। কাজেই বেশ গবেষণা চলছে। অনেক বিষয় সমাধান হলেও একটি বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতা আছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন, বদরুন্নেসা কলেজে কি কম্বাইন্ড সিস্টেম চালু হবে না যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে ?
তবে,এক্ষেত্রে যৌক্তিক সমাধান প্রয়োজন। যদিও এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব তবুও মতামত জানার জন্য বলতে হচ্ছে ! এটা নির্ধারণ করা গেলে কমিটির পক্ষে মডেল নিয়ে সমাধান দেওয়া সহজ হবে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে একটি গঠনমূলক কার্যকর প্রশাসন,ভালো শিক্ষক, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো ক্লাসরুম, গবেষণা বা সামগ্রিক কাজের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। তবে, পৃথিবীতে যেহেতু অনেক মডেলের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাই ৭ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তর ইস্যুতে মডেল নির্ধারিত হবে কম্বাইন্ড নাকি ছেলে-মেয়ে আলাদা সেটার উপর ভিত্তি করে। যৌক্তিক মতামত ও আলোচনার মাধ্যমে অল্প সময়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সায়েম মাহমুদ বলেন, তিনটি কলেজ কম্বাইন্ড হলে সুবিধা রয়েছে।
ফ্যাকাল্টিভিত্তিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর সহজ হবে। তিনটি কলেজে একই ডিপার্টমেন্ট তিনটি না থেকে একটি হবে এতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম হবে ( নতুন সেশনের ক্ষেত্রে)। অবকাঠামো কম প্রয়োজন হবে (পরবর্তী নতুন সেশনের ক্ষেত্রে) । তিনটি কলেজে একই ডিপার্টমেন্ট তিনটি না হয়ে একটি হলে গবেষণার জন্য একটি ডিপার্টমেন্টের জন্য একটি গবেষণাগার যথেষ্ট। এতে করে ল্যাব ফ্যাসিলিটিস ও গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকবে। এজন্য আমার কাছে মনে হয়, পাবলিক ইউনিভার্সিটি হিসেবে কম্বাইন্ড হওয়াটাই যৌক্তিক,আর যেহেতু এই ইউনিভার্সিটি সাতটি আলাদা আলাদা ক্যাম্পাসের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে, তাই ফ্যাকাল্টি ভিত্তিক হলেই পরিবর্তন সম্ভব।
ঢাকা কলেজ, ইডেন, বদরুন্নেসা এই তিনটা কলেজ কম্বাইন্ড হওয়ার সুবিধা উল্লেখ করে ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী ফারিয়া জান্নাত বলেন, ক্লাস রুমের সংকট যেমন কমবে শিক্ষকের সংকট কমবে কারণ তিনটা কলেজের একটা ডিপার্টমেন্টে ১৬টা করে রুম লাগে। যদি কম্বাইন্ড হয় তাহলে চারটা রুম হলেই হবে। শিক্ষকের দিক থেকেও একই রকম। অনেকটা চাপ কমে যাবে। আর ডিপার্টমেন্টগুলো ভাগ করে তিনটা কলেজের ভবনে দিয়ে দিলেই হয়ে যায় এতে করে আলাদা করে আর কোন রুম লাগছে না এবং কিছু রুম ফাঁকা থাকছে। চাইলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো নতুন নতুন ডিপার্টমেন্ট এড করা যাবে। অনেকে ঐতিহ্যের দিক ভাবলে ঐতিহ্য তো থাকছেই কারণ কলেজের ইন্টারের ক্লাস গুলো আলাদাভাবেই হবে শুধুমাত্র অনার্স মাস্টার্সের ক্লাস গুলো কম্বাইন্ড হবে। এতে করে ঐতিহ্যের ধারাটাও বহাল থাকবে ।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার বলেন, অনার্স এর শিক্ষার্থীদের আর কলেজের পরিচয় থাকছে না। সেহেতু বদরুন্নেসা থেকে অনার্স সরিয়ে নিয়ে ইডেন ও ঢাকা কলেজ এর সাথে কম্বাইন্ড করে দেওয়া যেতে পারে। এবং বদরুন্নেসার অনার্স এর জন্য শুধু আবাসন ব্যাবস্থা রাখা যেতে পারে। তাহলে ইন্টারদের ও কোনো সমস্যা হবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের ওই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, তা আট বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বরং, অধিভুক্তির পর থেকে শিক্ষক সংকট, ক্লাস-রুম,আবাসন,পরিবহন,ল্যাব-গবেষণাগার ও একাডেমিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে দেখা গেছে।
রাজু