ছবিঃ সংগৃহীত
আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। এ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের প্রধান শাখায় প্রতিবছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবারও এ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, ধারণক্ষমতার বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন করেছে ভিকারুননিসা স্কুল। এতে মেডিকেলে ভর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসে দিতে হবে। তাছাড়া এ কারণে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, অনিয়ম, প্রশ্নফাঁসসহ নানান আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখায় বিভিন্ন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্কুলটিতে প্রায় ৪ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ভিকারুননিসায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য আসন প্রস্তুত করা হয়। তবে এবার হঠাৎ ৬ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য আসন প্রস্তুত করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রথম ধাপে ৪ হাজার ৭০০ পরীক্ষার্থী আসন করা সম্ভব বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। পরে আরও ১ হাজার ৩০০ পরীক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে।
কী কারণে, কেন এমনটা করা হয়েছে, জানতে চাইলে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুইজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জনকণ্ঠকে জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীপ্রতি কেন্দ্র ফি পাওয়া যায়। বাড়তি আয়ের লোভে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমসহ কয়েকজন সক্ষমতার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছেন। এ কেন্দ্র ফির টাকাও তারাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।
তারা বলেন, এই ভর্তি পরীক্ষায় চিকিৎসকরাই ভর্তি পরীক্ষা তদারকি করবেন। তবে সার্বিক বিষয় দেখভাল করবেন প্রতিষ্ঠান প্রধান।
এদিকে, গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু হয়েছে। ভিকারুননিসা কেন্দ্রে কারা পরীক্ষা দেবেন, সেটাও পরীক্ষার্থীরা জেনে গেছেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থী সামিরা জাহান নুপুরের বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ম-জালিয়াতির কথা বাদ দিলাম, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী কোনো কক্ষে থাকলে মনোযোগ ধরে রাখাটাও কষ্টসাধ্য। সেজন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে এসএসএম পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, ‘ধারণক্ষমতার বাইরে বেশি আসন দেখানোর সুযোগ নেই। তারা কেন এটা করেছে, তা হুট করে বলতে পারবো না। কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের জন্য ইন্সপেকশন টিম করে দেওয়া হয়েছে। তারা ১৫ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবে। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে সেটা সংশোধন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শক থাকবেন চিকিৎসকরা। আর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বা কোনো অধ্যাপক। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং অনিয়ম-জালিয়াতির সুযোগ নেই।’
আসিফ/জাফরান