চরম বৈষ্যম্যের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা
চরম বৈষ্যম্যের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। কারিকুলাম থেকে বেতন কাঠামো ও সরকারি সুবিধায় পিছিয়ে রয়েছে এই মাধ্যমের পড়ুয়ারা। একটি সময় সরকারি প্রাথমিকের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও উপবৃত্তির আওতায় ছিল। তবে কোনো কারণ ছাড়াই এই উপবৃত্তি বন্ধ করে দেয় সরকার।
আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই মাদ্রাসার খুদে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির আওতায় আসছে। এর ফলে ক্রমাগত শিক্ষার্থী হারানোর সংকট থেকে মাদ্রাসাগুলো উত্তরণ ঘটবে বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘদিন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। এই অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও মিলেছে অনুমোদন। এতে প্রথম পর্যায়ে ৪৪২৫টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হবে। আগামী বছরের জুলাই থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির আওতায় আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদ্রাসা পর্যায়ে উপবৃত্তি চালু করা হলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়বে। কমবে ঝরে পড়া। এ ছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হবে। অর্থ বিভাগ থেকে জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতিতে এই শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মধ্যে এই অর্থ প্রদান করা হবে।
সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী প্রতি প্রাক্-প্রাথমিকের জন্য মাসে ৭৫ টাকা এবং প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাসিক ১৫০ টাকা উপবৃত্তি বাবদ আর্থিক সহায়তা পাবে। ইবতেদায়ি শিক্ষায় প্রাথমিক স্তরে কোনো পরিবারের একাধিক শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ দুইজন এই উপবৃত্তির আওতায় আসবে। তবে দুইয়ের বেশি সহোদর থাকলে অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী প্রাপ্য হবেন। এই অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে মা অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবেন। মায়ের অবর্তমানে বাবা অথবা উভয়ের অবর্তমানে বৈধ অভিভাবকের একাউন্টে এই অর্থ দেওয়া হবে।
সারা দেশে সংযুক্ত এমপিওভুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ৮২২৯টি। এমপিওবিহীন রয়েছে ১০৩৬টি। দেশে অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ১৫১৯টি। অনুদানের বাইর আছে আরও ২৩২০ মাদ্রাসা। এই পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ৩৮৩৯টি। প্রথম পর্যায়ে (জানুয়ারি-জুন) চার লাখ ৪১ হাজার ৬২০ জন শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তির আওতায় আসবে। আগামী বছরের জুলাই থেকে বাকি শিক্ষার্থীদের হাতেও তুলে দেওয়া হবে উপবৃত্তির টাকা।
মাদ্রাসা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) আবুল বাসার জনকণ্ঠকে জানান, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। আবার স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায়, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পায় না। এটি নিয়েও খুদে শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হতো। অনেক ক্ষেত্রে উপবৃত্তির আশায় মাদ্রাসা থেকে স্কুলে ভর্তি করা হতো। এমন নানা বৈষম্য এই উপবৃত্তির মধ্যে নিরসন হবে।
উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা থেকে জানা যায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে পাঠ্যদিবসে অন্তত ৮০ ভাগ দিন উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষককে যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ করতে হবে। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৮০ শতাংশ উপস্থিতি ছাড়াও ফল সন্তোষজনক হতে হবে। অকৃতকার্য হলে সেই শিক্ষার্থী উপবৃত্তির যোগ্যতা হারাবে।
পরবর্তী মাসে সে যোগ্যতা অর্জন করলে আবারও তাকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাদ্রাসায় আসা সম্ভব না হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে বৃত্তি প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
উপবৃত্তি প্রদানে তৈরি হয়েছে সফটওয়্যার ॥ সম্পূর্ণ ডিজিটালি শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। এর জন্য মাদ্রাসা অধিদপ্তর সফটওয়্যারও তৈরি করেছে। দপ্তরের চিঠি সূত্রে জানা যায়, বিএসিএস ও আইবাস ++ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। এর আগে ১২ হাজার ৬৯ জন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদানকারী ইবতদায়ি মাদ্রাসা পরিচালিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে। মাদ্রাসা দেখভালের দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তর আগে থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ফলে উপবৃত্তির বাইরে থেকে যায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার (১-৫ ক্লাসের) শিক্ষার্থীরা। আগামী বছর থেকে এই উপবৃত্তি দেওয়ার কারণে প্রাথমিক স্তর উপবৃত্তির আওতায় আসবে।