পাঠচক্র মেধা বিকাশ ও সৃজনশীল মানস তৈরির অন্যতম পাথেয়। পাঠচক্র শব্দটি শুনলে আমাদের মনে হয় একদল মানুষ মিলিত হয়ে কোনো বিষয়ে আলোচনা করছে। আসলেই তাই। পাঠচক্র হলো এক ধরনের আলোচনা সভা যেখানে একদল মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তাদের মতামত বিনিময় করে এবং জ্ঞানের আদান-প্রদান করে। পাঠচক্রের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের বৃদ্ধি, মতামত বিনিময়, সমস্যা সমাধান ও সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। তারই নিমিত্তে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখার মাসিক পাঠচক্র ও সাহিত্য আড্ডা গত ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের পাঠচক্রের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক জর্জ অরওয়েল কর্তৃক রচিত বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘অ্যানিমেল ফার্ম’। বইটি শাসক আর শোষিতের সম্পর্ক, স্বৈরশাসকের উত্থান ও নৈতিক অবক্ষয় অনুধাবনের জন্য অত্যন্ত সুখপাঠ্য।
আমাদের পাঠচক্র অনুষ্ঠানে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন। আড্ডাটি পরিচালনা করেন লেখক ফোরামের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদ হোসাইন। আলোচনাটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। মুভির শেষে আমরা দেখি সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করে; আদৌ কি এমন হয় বাস্তব জীবনে? উত্তর না! এখানে এক গল্পের শেষে নতুন গল্পের সূচনা হয়। এই যে গল্পের পেছনে অনেক গল্প থাকে, তা নিয়ে দারুণ এক ব্যঙ্গাত্মক রূপকধর্মী উপন্যাস ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ লিখে গিয়েছেন ব্রিটিশ লেখক জর্জ অরওয়েল। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে। লেখকের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। তবে তিনি জর্জ অরওয়েল ছদ্মনামে সমধিক পরিচিত। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর স্ট্যালিনের শাসনামলকে অবলম্বন করে লেখা হলেও প্রায় আট দশক পর আজও খুব প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আমাদের বিগত সরকারের স্বৈরশাসক রূপে আবির্ভাব ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও বেশি মিলে যায় এই গল্পের প্লট।
আমাদের আলোচক অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন স্যার প্রথমে লেখকের জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। যেমন তার জন্মস্থান, কর্মজীবন, তার পছন্দ-অপছন্দ এবং তার বিখ্যাত গ্রন্থ। তিনি বলেন, একজন লেখকের জীবনী তার লেখনির ধারা সম্পর্কে অবগত হতে সবচেয়ে জরুরি। এরপর একটি বই কিভাবে বয়সভেদে পাঠকের কাছে অর্থবহ হয় তার ব্যাখ্যা করেন; যেমনটা অ্যানিমেল ফার্ম শিশুদের জন্য উপকথা কিন্তু বড়দের কাছে রাজনৈতিক বই। এই বই কয়েকটি বিভাগকে সংযুক্ত করে। যেমন ম্যানেজমেন্ট, লোকপ্রশাসন। স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্র সম্মান যত্নের সঙ্গে পাহারা, দুর্বলতাকে ভয়, ভীতি ও শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ঢেকে রাখা ইত্যাদি বইয়ের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তার আলোচনায় পৃথিবীর প্রথম বিপ্লব থেকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বিপ্লবের সকল কিছু উঠে আসে। গল্প মূলত একটি ফার্মের একদল প্রাণীদের নিয়ে- যারা তাদের স্বাধীনতার জন্য এক হয়ে বিপ্লব সংঘটিত করে ফার্মের মালিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই আবার তাদের সাথীদের মাধ্যমেই শাসিত ও শোষিত হয়। বইয়ে সুস্পষ্টভাবে একজন স্বৈরাচারী শাসক শ্রেণির উত্থান দেখানো হয়েছে। প্রথমদিকে সবার জন্য ৭টি আইন জারি করে; তবে চালাক শূকররা তাদের সুবিধামতো এই আইনের পরিবর্তন করে। শূকরটির জীবনধারা উন্নত হলেও সাধারণ পশুজাতির জীবনমানের কোনো পরিবর্তন না হয়ে উল্টো অবনতি হয় এবং আরেকটি বিপ্লবের বীজ বপিত হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
‘অ্যানিমেল ফার্ম’ নিয়ে পাঠচক্র
শীর্ষ সংবাদ: