সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সমকামিতা, শিক্ষার্থী হ্যানস্তা সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে তার চূড়ান্ত চাকরিচূত করার দাবিতে আন্দোলন করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই শিক্ষাককে তদন্ত চলাকালীন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)। একইসঙ্গে তারা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যে এই তথ্য জানা যায়। এতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি তান্নি বিথি সর্দার।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে বিবৃতির হুবহু অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
প্যারিস, ফ্রান্স; ২৬ অক্টোবর ২০২৪: জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (JMBF) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে ২৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমকামিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকল বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত, যেখানে তাকে সমস্ত বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে, তা মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একাডেমিক স্বাধীনতার উপর আঘাত। এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে যা মানুষের মর্যাদা ও সমতার নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
JMBF অবিলম্বে হাফিজুল ইসলামকে বিরত রাখার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা অন্তর্ভুক্তি, বৈষম্যহীনতা এবং মানবাধিকারের মূল্যবোধ রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে।
ফ্রান্সের LGBTQI+ অধিকারকর্মী ও JMBF-এর প্রধান পরামর্শক রবার্ট সাইমন এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কেবলমাত্র যৌন প্রবণতা ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোনো শিক্ষকের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা গভীর বৈষম্য এবং অবিচারের প্রকাশ। এটি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বৈচিত্র্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত, বৈষম্য ও বৈরিতার স্থান নয়। আমরা এমন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করতে পারি না।”
বিশেষত উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, হাফিজুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তটি কিছু প্রো-ইসলামি ছাত্র সংগঠনের চাপে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে, যা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিষ্ঠার পর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে এবং এটি মানবাধিকারের মূল নীতির পরিপন্থী যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এটি এক ধরনের অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন যা কোনো একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বা গণতান্ত্রিক সমাজে স্থান পাওয়া উচিত নয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এবং বাংলাদেশি মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম বলেন, “এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর আক্রমণ নয়, বরং বাংলাদেশের স্বপ্নের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার মূল মূল্যবোধের উপর আক্রমণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত শেখার এবং অন্তর্ভুক্তির স্থান, এমন একটি স্থান নয় যেখানে কেউ তার পরিচয় বা ভাবা পার্থক্যের জন্য নিপীড়নের শিকার হয়। আমরা অবিলম্বে হাফিজুল ইসলামের পুনর্বহাল এবং পক্ষপাতহীন, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করি।”
JMBF বিশ্বাস করে, হাফিজুল ইসলামকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার এই সিদ্ধান্ত শুধু আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং নৈতিকভাবেও ভুল। এটি ন্যায়বিচার ও সমতার মূলনীতিকে লঙ্ঘন করে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
JMBF আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই ধরনের প্রকাশ্য বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য। তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং LGBTQI+ ব্যক্তিদের অধিকারের সুরক্ষার পক্ষে প্রচার চালাতে এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু পর্যালোচনার নিশ্চয়তা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি JMBF-এর আহ্বান যে, তারা যেন যৌন প্রবণতার ভিত্তিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখার নিশ্চয়তা দেয়।
JMBF এই পরিস্থিতিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে এবং হাফিজুল ইসলাম সহ বাংলাদেশের সমস্ত নিপীড়িত ব্যক্তিদের প্রতি সংহতি ঘোষণা করছে। পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষের সমতা, ন্যায়বিচার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগঠনটি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
রিয়াদ