ছবি সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময়ে বিক্ষোভ মিছিলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাত ৮ টায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জোহা চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় তারা, "আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ ", "কোটা না মেধা, মেধা মেধা ", "জনে,জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে" , "পোষ্য কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক", "আপস না মৃত্যু, মৃত্যু মৃত্যু ", "মেধাবীদের কান্না আর না, আর না", "সারা বাংলায় খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে", " আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব ", মেধাবীদের একশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন" প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করার পরও আমাদের সাথে বাবার কোটার ক্ষমতা দেখানো হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক পোষ্য কোটা থাকবে না। হয় স্থিতিশীল বাংলাদেশ থাকবে নয়তো পোষ্য কোটা থাকবে। পোষ্য কোটা ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ একসাথে থাকতে পারে না।জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিলো কোটার যৌক্তিক সংস্কার, আমরা শুধু মুক্তিযোদ্বা কোটা নয়,সকল প্রকার কোটার অবসান চেয়েছি। তাই এখনো পোষ্য কোটা বহাল থাকায় জুলাই বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয় নি।"
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সকল কোটা হারাম পোষ্য কোটা আরাম তা হবে না। অন্য কোটা অবসান চান কিন্তু নিজেদের বেলায় কেনো না।পোষ্য কোটার কবর রচনা রাজশাহী থেকেই হবে।আপনারা যদি পোষ্য কোটা বহাল রাখতেই চান তবে আগামী পরশু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে উন্মুক্ত বিতর্কের আহবান রইলো।সেখানে আপনারা পোষ্য কোটার যৌক্তিক কারণ দেখাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মেহেদি হাসান মারুফ বলেন,জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিলো কোনো প্রকার কোটা থাকবে না, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পোষ্য কোটা বিদ্যমান আছে ।যদি রক্ত দিতে হয় রক্ত দিবো তাও পোষ্য কোটা মেনে নিবো না।এই পোষ্য কোটার কবর রাজশাহীতেই রচিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার সুমন বলেন, ১৪ ই নভেম্বর আমরা অনশনে বসেছিলাম ভিসি স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাই নি।কোটা বাতিলের জন্য আমাদের ভাই জীবন দিয়েছে।কোটা প্রথা সংস্কার না হলে আমরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, পোষ্য কোটা এক প্রকার জুলুম। এ জুলুম নিরসনে আমরা বরাবরই সোচ্চার। জুলাই অভ্যুথানে রক্তের উপর দিয়ে আপনারা চেয়ারে বসেছেন। এখন তারাই স্ববিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। এটাকে আপনারা সুবিধা বলছেন।শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাইরে দিয়ে কেউ চেয়ারে থাকতে পারবে না।পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও রাবি শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মিশকাত চৌধুরী বলেন, কোটা ইস্যু বাংলাদেশে একটা মীমাংসিত ইস্যু। নতুন করে যারা কোটাকে পুনরায় প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছেন তাদেরকে উৎখাত করা হবে। হাসিনা যে পথে পালিয়েছে তারাও সে পথে পালাতে বাধ্য হবে ।যেখানে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত নাম্বার পেয়েও চান্স পায় না,পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থীরা ফেইল করেও ভালো সাবজেক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পরে অমুক ভাইয়ের ছেলে তমুক ভাইয়ের মেয়ে নামে চাকরি পেয়ে যায়। এটা তেলে মাথায় তেল দেয়ার মত একটা বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের যে কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি সেখানে কোনো প্রকার কোটা প্রথা থাকবে না। কোনো অমেধাবী অযোগ্যরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না।
আশিকুর রহমান