ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঊর্ধ্বতন ১১ পদের মধ্যে সাতটি শূন্য

কর্মকর্তা সংকটে স্থবির মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:২৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কর্মকর্তা সংকটে স্থবির মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড

জনবল সংকট দীর্ঘদিনের

জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। তবে প্রায় আড়াই মাস গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা না থাকায় নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে। সারাদেশ থেকে আসা হাজারও সেবাপ্রার্থী ভোগান্তিতে পড়ছেন। কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন। সেবা বঞ্চিত এসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক গালমন্দও করছেন বলে বোর্ডের কর্মচারীরা জানান। ফলে কর্মকর্তা সংকটে কার্যত স্থবিরতা নেমে এসেছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একমাত্র বোর্ডে।
এ বিষয়ে বোর্ড থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ রবিবার মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের সচিবকে ওএসডি করা হয়। এতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সংকট দীর্ঘতর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল সেখানে অভিযোগ ও অসঙ্গতি ছিল। যে কারণে কারিগরি সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে দ্রুত পদায়ন করা হবেও বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার, প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক, উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), উপ-রেজিস্ট্রার (কমন), উপ-মাদ্রাসা পরিদর্শক-২, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদ (১১ জনের মধ্যে ৭ জন) শূন্য রয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রককে এবং গত ২৬ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার, উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), উপ-রেজিস্ট্রার (কমন), উপ-মাদ্রাসা পরিদর্শক-২, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদে প্রেষণে কর্মরত সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু এসব পদে কোনো কর্মকর্তা প্রায় আড়াই মাস পদায়ন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য থাকায় বোর্ডের কাজ গতি হারিয়েছে।

এসব কর্মকর্তার পদগুলো বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে পদায়ন করা হয়। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় করে থাকে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীরা জানান, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম, সময়াবদ্ধ ক্রয় প্রক্রিয়া, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি, গভর্নিং বডি, নির্বাহী কমিটি, এডহক কমিটি অনুমোদনের আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম, আওতাধীন মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তি কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের বিভিন্ন আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম, আওতাধীন মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চূড়ান্ত বরখাস্তের আবেদন নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন মামলার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন রেজিস্ট্রার।

কিন্তু এই পদে কেউ না থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যমান কারিকুলাম পরিমার্জন কাজে এনসিটিবি কে সহায়তা প্রদান, দাখিল ও আলিমের সিলেবাস ও মানবণ্টন পুনর্বিন্যাসকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম দেখভাল করেন প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক। তিনিও বদলি হয়েছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম, মাদ্রাসা সমূহের ম্যানেজিং কমিটি, গভর্নিং বডি, নির্বাহী কমিটি, এডহক কমিটি অনুমোদনের আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম, অধিভুক্ত মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তি কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের বিভিন্ন আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম, আওতাধীন মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চূড়ান্ত বরখাস্তের আবেদন নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন কাজ করেন উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন)।

এই পদেও কেউ না থাকায় সেবাপ্রার্থী ও কর্মরতরাও নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। নাম ও বয়স পরিবর্তন, সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম, শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন, রেজিস্ট্রেশন সংশোধন, আওতাধীন মাদ্রাসাসমূহের ই-অফিস ব্যবস্থাপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, বোর্ডের পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রভৃতি করেন উপ-রেজিস্ট্রার (কমন)। সরেজমিন, বয়স পরিবর্তনের কারণে একাধিক ব্যক্তি মাদ্রাসা বোর্ডে ঘুরাঘুরি করছেন। অনলাইনে আবেদন করেও বোর্ডের তারিখ পাচ্ছেন না বলে জানান।

দাখিল পরীক্ষা-২০২৫ এর প্রশ্নপত্র পরিশোধন কাজ, নাম ও বয়স শুদ্ধকরণ সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম, বিদেশগামী শিক্ষার্থীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের সনদ, নম্বরপত্র যাচাই/সত্যায়ন, আলিম পরীক্ষা-২০২৪ পুনর্নিরীক্ষণ পরিচালনা করেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়)। এই কর্মকর্তার সংকটের কারণে আগামী দাখিল পরীক্ষার কার্যক্রম নিয়েও স্থবিরতা কাজ করছে। এছাড়াও উপ-মাদ্রাসা পরিদর্শক-২ ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ না থাকার ফলেও দৈন্যদশা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কারিকুলাম পরিমার্জন কাজে এনসিটিবি কে সহায়তা প্রদান, দাখিল ও আলিমের সিলেবাস ও মানবণ্টন পুনর্বিন্যাসকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম দেখাশুনা করেন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি নতুন কারিকুলাম বাতিল করে সৃশনশীল কারিকুলামে ফিরছে শিক্ষা ব্যবস্থা কিন্তু এই পদে কেউ না থাকায় মাদ্রাসা বোর্ডের কারিকুলামেও কোনো অগ্রগতি নেই।

×