ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র

প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ‘করুণ চিত্র’

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ‘করুণ চিত্র’

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা।

দেশের সব স্তরের শিক্ষকরা খুবই কম বেতন-ভাতায় চাকরি করছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকরা অর্থকষ্টে দিন পার করেন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের। মূল্যস্ফীতির চরম দিনগুলোতে অর্থসংকটে সংসার চালাতে দিশেহারা শিক্ষকসমাজ। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় জনবল ধরে রাখতে দ্রুত বেতন-ভাতা ও সুবিধা বাড়ানো উচিত।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রবিবার (১ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রদান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্যরা।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের ৩৯৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে শিক্ষা বিষয়ে ১৯ পৃষ্ঠা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে কমিটি। সেখানে ‘পেশা হিসেবে শিক্ষকতার অগ্রগতি’ শিরোনামে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার করুণ অবস্থা তুলে ধরা হয়। প্রাথমিক শিক্ষকের বেতনে এশিয়ায় ৪৫তম বাংলাদেশ।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার পর সরকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের দায়িত্ব নেয়। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ জাতীয় বেতন কাঠামোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খুব নিচের স্তরে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পান। তাদের মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তারা অবস্থানভেদে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে সর্বমোট ১৯ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।

গবেষণা বলছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের শুধু খাবারের খরচই ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গড় বেতন ১৭০ ডলার, যা বাংলাদেশের গড় মাসিক মাথাপিছু আয়ের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম। উচ্চমূল্যে খাবার কিনে খেয়ে প্রাথমিকের একজন শিক্ষকের পক্ষে সংসার চালানো পাহাড়সম কঠিন। 

বিশেষ করে যারা সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাদের জন্য এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছর মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকরা এখনো ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, তা দিয়ে মূল্যস্ফীতির এ কঠিন সময় পার করছেন তারা।

বেতনের হিসাবে বিশ্বের দেশগুলোর চেয়ে বহু পিছিয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিকের শিক্ষকর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৪৫তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকদের এ দাবি (দশম গ্রেড বাস্তবায়ন) যে যৌক্তিক তা সরকার বরাবর বলে আসছে। কিছু বাস্তবতায় সেটা এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি মাথায় আছে। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি এটা বাস্তবায়ন হবে হয়তো।’

এম হাসান

×