ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কবার্তা ইউজিসির

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২৯ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৪২, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কবার্তা ইউজিসির

ফাইল ফটো

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততার শেষ নেই। প্রায় ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাদের বড় অংশ যুক্ত হয় ভর্তি যুদ্ধে। আসন স্বল্পতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে বেসরকারি ভার্সিটিতে। 

ভর্তির এ মৌসুমে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কোনো নাম-সর্বস্ব বা অনুমোদনহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হন, সেজন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে উচ্চশিক্ষার তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংস্থাটি ৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছে। এর সঙ্গে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে শিক্ষার্থীর কাছে দায়মুক্তিও চেয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি সংস্থা ভর্তির বিষয়ে সতর্কতা দিয়ে আসছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো কিভাবে ভর্তি করে সে বিষয়ে ইউজিসির ক্ষমতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ম করে আসছে সেগুলো বন্ধ করা উচিত।

বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানায়, ‘নিষেধাজ্ঞা’র আওতায় পড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কারও কারও আবার অনিয়মের কারণে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে তার দায় ইউজিসি নেবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এরপরও কেউ কোনো অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রামে বা অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত আসনে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরবর্তীতে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষিত অথবা প্রোগ্রাম বাতিল হলে বা অনুমোদিত আসন সংখ্যার অধিক আসনে ভর্তি হয়ে সনদ বাতিল হলে তার দায়-দায়িত্ব ইউজিসির ওপর বর্তাবে না।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ -এর অধীনে বর্তমানে ১১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ১০৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বিরাজমান, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রকাশ করেছে কমিশন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত কমিশনের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সতর্কবার্তা 
ইবাইস ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই- তথা বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। তাছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্ব›দ্ব এবং আদালতে মামলা রয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ইবাইস ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই। এর ফলে এই ভার্সিটিতে ভর্তির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি 
বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই তথা বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা 
বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই তথা বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও এর ফলাফল এবং প্রদত্ত অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ 
নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশন কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। এখনও তা বহাল রয়েছে। তবে ওই তারিখের পূর্বে চলমান কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা) 
বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগ করা ভাইস চ্যান্সেলর নেই। ট্রেজারার নিয়োগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম দ্বারা অডিট করা হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন সংক্রান্ত জটিলতা, পারস্পরিক দ্ব›দ্ব ও মামলা চলমান রয়েছে। 

এ কারণে কমিশন কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত গত ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। তা এখনও বহাল আছে। তবে এ তারিখের পূর্বে চলমান কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ 
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়েও তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়  
আদালতের আদেশবলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি 
২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর সরকার কর্তৃক বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল। শর্তটি হলো- এক বছরের মধ্যে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্পিত শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত সব শর্ত পূরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম না হয়, তবে শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত এ সাময়িক অনুমতি তাৎক্ষণিক বাতিল হবে। শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুইন্স ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। 
 

এসআর

×