চলছে প্রতিবাদ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের ভয়াবহ পতন ঘটলেও স্বৈরাচার সরকারের গণহত্যায় সমর্থনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ৫ আগস্টের পর পতিত সরকারের প্রভাবশালী এই আমলারা আন্দোলনের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় চাকুরিচ্যুতির আশঙ্কায় থাকলেও বেশির ভাগই নমনীয়নীতিসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। সেই সুবাধে কিছু দিনের জন্য কোনঠাসা হয়ে পড়া আমলারা বর্তমানে আরো বেশি দাপট দেখাচ্ছেন এবং তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রশাসনিক থেকে সবখানেই কৌশলে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ স্বৈরাচারের অবসান হয়। তখন সারাদেশের মতো বশেমুরবিপ্রবিতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর দীর্ঘদিন পর নতুন উপাচার্য নিয়োগ পান ড. মোঃ হোসেন উদ্দিন শেখর। নবনিযুক্ত উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিতে সম্মুখ সারিতে অবস্থান করতে দেখা যায় গত ৪ আগস্ট চলমান গণহত্যায় সমর্থন করে আন্দোলনকারীদের চামড়া তুলে নিতে চাওয়া এবং শিবির আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান হবে না বলে মিছিল করা কর্মকর্তাদের। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল কর্মকান্ডে তাদের দেখা যাচ্ছে।
এসকল কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মধ্যে আছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম, আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিকের হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে হুমকি দেওয়া নিরাপত্তা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ তারেক, উপ-রেজিস্ট্রার ফারজানা ইসলাম , ডেপুটি রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হীরা ও কেন্দ্রীয় ভান্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার মো সাইফুল্লাহ ইসলাম রাজুসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বক্তৃতায় আন্দোলনকারীদের হুমকি প্রদান ও তাদের তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে প্রেরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের সমন্বয়ক আল মাহমুদ বলেন,
'৫ ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর আমরা দেখেছি বাংলাদেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সংষ্কার এসেছে, তবে লজ্জাজনক হলেও এর ব্যাতিক্রম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাথা উচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে। আমি মনে করি এটা আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে বেঈমানী। আজ যদি আমরা বিজয়ী না হতে পারতাম তারা আমাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতো না। তাই আমি প্রশাসনের নিকট আবেদন জানাচ্ছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে গনহত্যায় সমর্থনকারী ও ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নিবেন।'
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের অন্য একজন সমন্বয়ক সুবর্ণা রায় বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলো কিংবা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সস্মতি উৎপাদন করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভিসিকে জানিয়েছি। যারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্যাগিং করে অমানবিক ভাষায় মিছিল করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা না করতে পারলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। বর্তমান প্রশাসনকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রধান স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ না। তাদের কাজ শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়া।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন," আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে তার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এখন অভিযোগ কি? ব্যক্তি কে? এটা যদি তারা চিহ্নিত করতে পারে তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।'
শিহাব উদ্দিন