পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর
আওয়ামী সরকার পতনের পর পুরাতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে ঢেলে সাজানো হয়েছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। তবে নতুন কর্মকর্তাদের যোগদানের পরও সংস্থাটির কাজে গতি আসছে না। কারণ এসব কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব পরিদর্শনে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ, পরিদর্শনে যাওয়ার প্রতিযোগীতা ও চেইন অব কমান্ড ঠিক মত কাজ না করায় ডিআইএ অচল হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদন্তে যেয়ে কর্মকর্তাদের মারও খেতে হয়েছে। যা নিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিআইএ সারাদেশের স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা পরিদর্শন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি খুজে বের করায় তাদের কাজ। তবে সম্প্রতি সদস্য বিদায়ী পরিচালক ও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালকের মনস্তাত্বিক দূরত্ব প্রতিষ্ঠানটিতে অচলবস্থার তৈরি করে। এছাড়াও পরিদর্শনে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ ও আসছে একাধিক তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এসব বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষায় অসংখ্য দপ্তর-অধিদপ্তর। নানা সংকট ও যৌক্তিক দাবি রয়েছে। যাদেরকে বসানো হয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখছি একাধিক গ্রুপ- অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ও ভুয়া অভিযোগ দিয়ে নানাভাবে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। অনেক দপ্তরে দল-উপদল রয়েছে। কিন্তু আমরাও বসে নেই। খবর পেলেই তদন্ত করছি। প্রমাণিত হলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিআইএর বিষয়েও তিনি খোঁজ নিবেন বলে জানান।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখনো শিক্ষাবোর্ড, বিভিন্ন কলেজে প্রিন্সিপাল নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য চলছে অস্বীকার করবো না। অনেক কর্মকর্তারাই এর সঙ্গে জড়িত। আমার নিজস্ব লোকজন এসব বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছে। আমিও নিয়মিত রিপোর্ট নিচ্ছি ও বদলি করছি।’
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থাটিতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বেড়েছে। নতুন যারা এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তাদের প্রশাসনিক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে পরিদর্শন, প্রতিবেদন তৈরি , নথি উপস্থাপন, শাখা পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। দপ্তরটি ঠিকমত ফাংশন করছে না। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পরিচালক ও যুগ্ম পরিচালকের দ্বন্দ।
গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ডিআইএতে যেয়ে পরিচালক প্রফেসর কাজী মো. আবু কাইয়ুমের সঙ্গে যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সারের দূরত্ব দেখা গেছে। যুগ্ম পরিচালক পরিদর্শনে কর্মকর্তা বাছাইয়ে পরিচালক স্বেচ্ছাচারিতা করছেন বলে একাধিকবার নানা মহলে অভিযোগ তুলেন। আবার এদিকে ডিআইএর কর্মকর্তাদের অভিযোগ যুগ্ম-পরিচালক নানা কৌশলে নিজ বলয়ের কর্মকর্তাদের ডিআইএতে ঢুকিয়েছেন। তিনি অফিসে দেরিতে আসেন ও নথিপত্রের কাজ না করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের সময় দেন। এছাড়াও তিনি সাবেক উপ পরিচালক ড. রেহেনা খাতুনের জুনিয়র হওয়ার পরও খারাপ ব্যবহার করেছেন। যার অভিযোগ সচিব পর্যন্ত গড়ায়।
অভিযোগের বিষয়ে যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পরিচালক দপ্তর প্রধান। তার কথা মেনে চলায় আমার কাজ। কিন্তু পরিদর্শনের জন্য কর্মকর্তা নির্ধারণে তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সব ঠিকঠাক করার পরও তা কেটে ফেলে দেন। অফিসে দেরিতে আসা ও রেহেনা খাতুনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।’
এ বিষয়ে রেহেনা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ব্যাচে সিনিয়র হওয়ার পরও সে পদে বড়। আমি ১৬ ব্যাচের, বর্তমান যুগ্ম পরিচালক ২২ ব্যাচের। এরপরও তিনি আমার নাম ধরে ডাকতেন। খারাপ ব্যবহার করতেন। আমি বিষয়টি তৎকালীন পরিচালক ও শিক্ষা সচিবকে জানিয়েছিলাম। সচিব স্যার বললেন, আপনি বদলি চান কী না। পরে আমি চেয়েছি। তারা আমাকে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে বদলি করেছে।
যুগ্ম পরিচালকের সঙ্গে দ্বন্দের বিষয়ে প্রফেসর কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে কোন কথা বলতে রাজি হননি। পরে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘দপ্তরটিতে নানা জায়গা থেকে নানা মানুষ এসেছেন। আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র দুই মাস। মানসিক দূরত্বকে ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে তিনি জানান, এই নিয়ে যুগ্ম পরিচালকের সঙ্গে আমার দুইবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।’
তবে এর পরই গত বুধবার (২১ নভেম্বর) ডিআইএ পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ডিআইএ থেকে তাকে ময়মনসিংহের মুমিন্নুনিসা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক করা হয়েছে।
ডিআইএর কর্মকর্তারা জানান, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের রেষারেষিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মকর্তাদের মার খেতে হচ্ছে। গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজে সরকারি কলেজে একটি কর্মশালায় গিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুলে ছাত্র-জনতার হাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুল আলম (মাসুম)। যা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিআইএ। তদন্ত কমিটির প্রধান দায়িত্ব যাকে দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এম হাসান