ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

 ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করবে সরকার

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২০ নভেম্বর ২০২৪

 ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করবে সরকার

সাত কলেজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজের আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করবে সরকার। ভবিষ্যতে যেন কলেজগুলো নিয়ে কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেটি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০১৭ সালে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল কলেজগুলো। তারও আগে রাজধানীর পুরাতন কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় আট বছর আগে বের করে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। বিগত সরকার এই উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই কলেজগুলো নিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়। কলেজগুলোতে পাঠদান করেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা, আবার প্রশ্নপত্র তৈরি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। খরচ বাড়লেও আশানুরূপ মানোন্নয়ন হয়নি কলেজগুলোর, বরং অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রকট হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায় সময়েই আন্দোলন করতে থাকে রাস্তা অবরোধ করে। এতে সাধারণ নাগরিকরা চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী এই সাত কলেজকে তড়িঘড়ি করে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়। এর ফলে অধিভুক্তির পর থেকেই কলেজগুলোর প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা সামনে আসে।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, সিলেবাস নিয়ে ধোঁয়াশা, তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিযুক্ত ফল, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে যায়। মানোন্নয়নের জন্য ঢাবি অধিভুক্ত করায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বাড়লেও সমস্যা নিরসন হয় না।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি-দাওয়া নতুন করে তুলে ধরতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে সাতটি কলেজকে একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

তবে ১৮ নভেম্বর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এককভাবে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করার দাবিতে সড়ক ও রেল পথ অবরোধ করেন। গত ১৮ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে তিতুমীরকে স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠনের আশ্বাসে ফিরে আসেন অসন্তোষ নিয়েই। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ১৪ শিক্ষার্থী আবারও একই দাবি নিয়ে সচিবালয়ে যান।

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের জানান, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সম্ভব কি-না, তা যাচাইয়ের জন্য আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করবে।

অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম জানান, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়া খুব কঠিন। তবে ঢাকা উত্তরে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এছাড়া তিতুমীর কলেজের ১০ একর জমি রয়েছে। কমিটি সব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত জানাবে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর সানি  বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি করে দেওয়া হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই সাতটি কলেজকে পৃথকীকরণ করা হবে। সেটি করার জন্য তো একটি প্রক্রিয়া লাগবে। যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটি কলেজগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সুপারিশ করবে। তিতুমীর কলেজের বিষয়ও সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘রাস্তায় আন্দোলন ও দাবিতে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় করবো না। সেটা যদি করা হয় তাহলে বাংলাদেশের অনেক কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। দেশে অনেক ভালো কলেজ আছে। হঠাৎ করে আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় না।

কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঢাকা কলেজসহ সাতটি কলেজের পৃথকীকরণসহ শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে অন্য একটি কমিটি কাজ করছে। এর আগে এই সাতটি কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কথা হয়েছে। যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অতি শিগগিরই আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটির কাজ হবে তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সুপারিশ করা। এটিই সরকারের অবস্থান।

মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কিনা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সহজ বিষয় নয়। আর সাতটি কলেজ ঢাকায় প্রয়োজনও নেই। এই সাতটি কলেজ রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আবার তিতুমীর কলেজকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে সারা দেশের সব ঐতিহ্যবাহী কলেজ একই দাবি করতে পারে। শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক। ঢাকার সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করারও কোনও সুযোগ নেই। তিতুমীর কলেজের চেয়েও একাধিক ভালো কলেজ রয়েছে দেশে।

শহিদ

×