ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মধ্যরাতে জুনিয়রদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে নয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সোমবার (১৮ নভেম্বর) পাঁচ শিক্ষার্থী হলের অন্য শিক্ষার্থীদের হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে এই ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটি আগামী রবিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ড. ফখরুল ইসলাম, হলের আবাসিক শিক্ষক রাসুল-ই-ইলাহী, সদস্য সচিব হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমান।
এদিকে ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীদের পক্ষে থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দীন। তিনি জানান, পাঁচজন এখনো থানায়। আছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, শরিফুল ইসলাম লিমন, কান্ত বড়ুয়া, জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল ও ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া। এদের মধ্যে হাতেনাতে ধরা পড়া সাব্বির, শেহান, লিমন, কান্ত ও সঞ্জয়কে থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।
জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের ওই হলের ৩৩০ নং কক্ষে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান শরীফ শেখ। পরে ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ১২ থেকে ১৩জন ওই কক্ষে যান। তারা সবাই ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর অবশিষ্ট চারজনের উপর অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।
ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা ক্যাম্পাসে আসছি ১৭ দিন হয়েছে। তারা আমাদের ১৭ দিনে কি পরিমাণ যে মানসিক নির্যাতন করছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সেখানে আমাদের পাঁচ রকমের হাসি দেয়া, কল দিয়ে বাজে ভাষা বলা ও নাচতে বাধ্য করা হয়৷ এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাত এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত আমাদের বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা৷
এসময় কয়েকজনকে পর্ন সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা, পর্ন তারকা সেজে অভিনয় করা, অশ্লীল কবিতা পাঠ করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। তারা আমাদের কয়েকজনকে সিগারেট খাওয়ার অভিনয়, গাঁজা-পট কিভাবে টানে সেটির অভিনয়, পাছা ঘুরিয়ে হাস লিখা, পকের নামতা বলা ও রিলেশনশিপের উপর এসাইনমেন্ট লিখতে বলেন। এসময় সেখানে ছিলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া ও জিহাদ।
লালন শাহ প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমি নিজেই এর আহ্বায়ক। আগামী রবিবারের মধ্যে আমরা সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, যেহেতু হলের বিষয়। হল বডি তদন্তের পর আমাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ পেশ করবে। তারপর আমরা যেখানে যা করার করবো। আমরা সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথেই বসেছি। এই ব্যাপারটা আমরা সিরিয়াসলি নিচ্ছি। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
নুসরাত