জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে পদযাত্রা ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আগামী ২৭ নভেম্বর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত এ পদযাত্রা ও সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দীর্ঘ শোষণ-জুলুমের বিরুদ্ধে এদেশের ছাত্র-জনতা এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলে। গণআন্দোলন দমাতে এমন নৃশংস হামলা এবং বর্বরতা নজিরবিহীন। সরকারের হামলা-মামলা- নির্যাতন উপেক্ষা করে বন্দুকের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে অসংখ্য ছাত্র-জনতা। এ আন্দোলনে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ২০ হাজারের অধিক মানুষ। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এ লড়াইয়ে অংশগ্রহন করেছে শ্রমিক, হকার, দোকান কর্মচারীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ লড়াইয়ে নারীদের ভূমিকা ছিলো খুবই অগ্রনী এবং সাহসী। এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে নিহিত ছিলো স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। ফলে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিলো দ্রুত সময়ে হতাহতের সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরী করে তাদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা এবং আহত আন্দোলনকারীদের সুচিকিৎসা সহ পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এ বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এই আন্দোলনের যৌক্তিক এবং নৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হলে গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় সাড়ে ৩ মাস সময় অতিক্রান্ত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এ গণহত্যার বিচার আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ আশঙ্কা আরও পাকাপোক্ত হয় যখন আমরা দেখি, ৫ আগস্টের পর সরকার এবং সেনা হেফাজতে থাকা গণহত্যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিরাপদে বিদেশে চলে যান। সরকার এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া এসব ঘটনা ঘটা অসম্ভব। আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবহেলার ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব এবং প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছিলো। ফলে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নানাভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান– ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পায়তারা বন্ধ করে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করুন।
এসময় তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার কর। শহিদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা, আহতদের সুচিকিৎসা এবং পূনর্বাসনের ব্যবস্থা কর; ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পায়তারা বন্ধ কর। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাও; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রন করো। নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য আমি রেটে রেশন দাও। সিন্ডিকেট এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু কর; শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা বন্ধ কর, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ কর। গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচার করো; পুনর্বাসন ছাড়া রিকশা শ্রমিকদের হয়রানি করা বন্ধ কর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়াসহ জোটের নেতারা।
নুসরাত