জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
রিমোট সেনসিং। যার অর্থ দূর থেকে কোনো কিছু দেখার চেষ্টা করা। এটি এক ধরনের বিজ্ঞান যা ভূ-পৃষ্ঠে কোনো দৃশ্যমান বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। অন্যদিকে ভৌগোলিক তথ্য পদ্ধতি (জিআইএস) হলো ভৌগোলিক তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে জিআইএস বলতে স্থানিক ও অস্থানিক উপাত্ত সংগ্রহ করে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সমন্বয় করে তা মানচিত্রে উপস্থাপন করাকে বুঝায়।
১৯৬০ সাল থেকে রিমোট সেনসিং এন্ড জিআইএস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণার বিষয় হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২০১৭ সালের আগে কার্যকর কোন ইনস্টিটিউট ছিলো না।
বাংলাদেশে একাডেমিক পর্যায়ে রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি বিকাশের উদ্দেশ্যে ১৯৮২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমবারের মতো প্রোস্ট-গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট হিসেবে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং এন্ড জিআইএস একাডেমিক পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দেয়।
২০২১-২০২২ সেশন থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে নিয়মিত কোর্সে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশেও রিমোট সেনসিং এন্ড জিআইএস প্রযুক্তি প্রসারের অসংখ্য ক্ষেত্র বিদ্যমান। কিন্তু এটি খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে জানিয়ে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের আবাদি, অনাবাদি জমি, জলাশয়, মানববসতি, বনভূমির পরিমাণ, অবস্থা ও পরিবর্তন নির্ণয় করা যায়। খুব সহজেই স্যাটেলাইট থেকে গৃহীত ইমেজ ডাটার পিক্সেল বিশ্লেষণ করে কোন সময় কি ধরণের পরিবর্তন হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চর্তুথ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এজন্য নিজস্ব রিসোর্স বাড়ানোর পাশাপাশি আমরা চীনের বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা- নাসার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টটেন ডেভেলপমেন্ট (ICIMOD), ইউনাইটেড নেশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) ও অক্সফোর্ড কমিটি ফর ফেমিন রিলিফ (OXFAM) এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেছি।
ইতোমধ্যে আমেরিকান মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা- নাসা ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টটেন ডেভেলপমেন্ট এর আর্থিক সহযোগিতায় জাবির এই ইনস্টিটিউট এর স্নাতকোত্তর শ্রেণির ১০ শিক্ষার্থীকে ৫০০ ইউএস ডলার করে মোট ৫ হাজার ইউএস ডলার সমপরিমাণ আর্থিক গবেষণা সহায়তার চেক প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ইনস্টিটিউটটি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এছাড়া, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ১২৬টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে এই ইনস্টিটিউটের প্রথম ব্যাচের ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ শিক্ষার্থী ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তিসহ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে।
ইসরাত