ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

মহাসড়ক অবরোধ

ছাত্রী নিহতের ঘটনায় ফের উত্তাল ববি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল 

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ১ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্রী নিহতের ঘটনায় ফের উত্তাল ববি

সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বাস চাঁপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাইশা ফওজিয়া মিম নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ সড়কসহ কয়েক দফা দাবিতে শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে ফের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বাস মালিক ও প্রশাসন ববি’র ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় পুনরায় ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ফের অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাস মালিক ও প্রশাসনকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে কিন্তু প্রশাসন ও বাস মালিকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনায় বসতে রাজি নন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদেরকে পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে ডিসি অফিসে আলোচনায় যাওয়ার জন্য। আমরা ডিসি অফিসে আলোচনায় কেন যাব? আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের দাবিগুলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আলোচনা করবো, কারণ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্যাম্পাসে আলোচনায় বসতে না চাওয়ায় আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি।

অপরদিকে মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন কথা বলেছেন। এসম তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বিষয়টির সমাধান করা, প্রয়োজন হলে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ করে হলেও সমস্যার সমাধান করবো। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে সিকিউরিটি রিজন ক্যাম্পাসে তাদের আসা নিয়ে একটি কথা রয়েছে, সেজন্য তারা এখানে আলোচনায় বসতে চাচ্ছে না। তবে আমি যাবো সেই জায়গাতে।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ওখানে যাবো না, এখানে সিকিউরিটির কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর আমরা কি সন্ত্রাসী তাহলে তারা এখানে আসতে চায় না কেন? এসময় উপার্চায বলেন, তোমরা যদি সলিউশন চাও তাহলে চলো আমরা আলোচনা করি। তবে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সলিউশন চাই তবে এখানে তাদের আসতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাকিবুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বাস মালিক ও তার লোকজন বরিশালে এসেছেন। তারা প্রশাসনের কাছে আছেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় বসতে চায় কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তার কারনে জেলা প্রশাসকের অফিসে আলোচনায় বসতে চাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কথা বলছেন আশাকরছি বিষয়টি দ্রুত একটি সমাধানে আসবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের ভোলা রোডের পুলিশ বক্সের পাশে নারায়নগঞ্জ ট্রাভেলস নামের একটি বেপরোয়াগতির যাত্রীবাহি বাস মাইশা ফওজিয়া মিমকে চাঁপা দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বসটিকে ধাওয়া দিয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজায় আটক করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে নিয়ে আসে। 

অপরদিকে ঘটনাস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। সহপাঠীর মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্দ হয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে নারায়নগঞ্জ ট্রাভেলস নামের বাসটিকে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে মধ্যরাতে ঘাতক চালক ও হেলপারের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।

এরপর বৃহস্পতিবার মাইশা নিহতের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিসহ কয়েক দফা দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে নিহত মাইশা ফওজিয়া মিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে টানা পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ ও উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রাখেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, মাইশা ফওজিয়া মিমকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকান্ড। দোষীদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, নিরাপদ সড়কসহ বাস মালিককে হাজির করতে হবে, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, বাসের রুট পারমিট বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার জন্য নির্ধারিত স্পিড; সেন্সর ও স্পিড ব্রেকার নির্মান, হাসপাতাল ব্যবস্থা উন্নতিকরণ, অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা বাড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাস্তা মেরামত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুটপাথ এবং ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করতে হবে। 

এসব দাবিতে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে টানা ১৩ ঘণ্টা অবরোধ করে যাত্রীবাহী ৩০টি বাস আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের (শিক্ষার্থী) জিম্মায় রাখেন।

রিয়াদ

×