ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সেন্টার অব এক্সিলেন্স

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:২২, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

সেন্টার অব এক্সিলেন্স

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রেক্ষাপট ও উচ্চশিক্ষার বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। সেই ভিন্নতা বিশ^বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও গবেষণাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রত্যেকটা সূচকে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিদেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের কাজের পরিবেশ পুরোপুরি শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব, কিন্তু দেশে এ চিত্রটা ব্যতিক্রম।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যকে একাডেমিক কাজে যে পরিমাণ শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি মেধা ও শ্রম দিতে হয় নন-একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সামলে নিতে। পরিস্থিতি যখন এমনইÑ তখন প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) পেয়েছে যোগ্যতম একজন উপাচার্য। যার পেশাগত ক্যারিয়ারে রয়েছে বিশ^মানের একাডেমিক ডিগ্রি ও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক দক্ষতার অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং (কেমিক্যাল) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি ও পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ অর্জন করেন। একজন গবেষক, পরামর্শক ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তার ১৮ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ, কার্বন ক্যাপচার, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জীবাশ্ম জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’
উপাচার্য হিসেবে যোগদানের প্রথম দিনেই তিনি নোবিপ্রবিকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ কাজে তিনি সর্বাগ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাদের উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নোবিপ্রবিকে উন্নত বিশ^বিদ্যালয়ে পরিণত করতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের স্বপ্ন-সারথি হিসেবে পেতে চান তিনি।
কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বিনির্মাণের এ সময়ে একজন উপাচার্যকে বিশ^বিদ্যালয়ে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে সেখানকার শিক্ষার্থীদের। একটি বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরাই হলো অন্যতম অংশীজন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে দেখা যায়Ñ শিক্ষার্থীদের অব্যক্ত কথা শোনা হয় না, তাদের কথার গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের চাহিদা ও মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কার আনা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নোবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য।

যোগদানের প্রথমদিনেই আনুষ্ঠানিক প্রথম সভাটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই করেছেন তিনি। ওইদিন রাতেই হলগুলো পরিদর্শন করেন। হলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের খাবারের মান ও থাকার রুম সরেজমিনে দেখেন। ইতোমধ্যে হলে খাবারের দাম কমিয়ে এনেছেন। আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের ও বন্যার্তদের ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আবাসিক হলসমূহে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে একমাত্র নোবিপ্রবিতেই সবার আগে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে সমর্থ হয়েছেন উপাচার্য। এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা যেন বিশ্বের যেকোনো দেশের গ্র্যাজুয়েটদের তুলনায় পিছিয়ে না পড়ে এবং কোনোভাবেই সেশন জটে না পড়ে, সে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন।

অবকাঠামো
দেশের ২২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি সেক্টরে পঞ্চম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালে। একশ’ একর জায়গায় ৪টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৮০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। সময়ের পালাবদলে বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদ এবং ২টি ইনস্টিটিউটের অধীন ৩৩ বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৮,৫০০।

শিক্ষক আছেন ৪২০ জন, যার মধ্যে পিএইচডিধারী শিক্ষক রয়েছেন ৯১ জন এবং পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত আছেন ১১৭ জন। বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসি ও ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগে পিইচডি চালু করা হয়েছে।

নতুন স্বপ্ন, নতুন যাত্রা
একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিক দিকে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তুলতে একজন দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ উপাচার্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ, একজন উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী, যার যোগ্য নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে চলে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তেমনি এক উপাচার্য হলেন বরেণ্য গবেষক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি ৫৪টিরও বেশি পিয়ার রিভিউড গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও ফিলিপিন্সসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টিরও অধিক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ রিসার্চ ফান্ড, ইউএসএআইডি-ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স ফান্ড, ইউএসএর মতো সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত ২০টি গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির মতো সংস্থার সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত।

×