ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২০:০৯, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা

ইউজিসি কর্মকর্তা মনির উল্লাহ

আওয়ামী সরকারের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভোল পাল্টে তিনিই এখন বিএনপির বড় অনুসারী। আর এই প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গুরুত্বপূর্ণ পদে দপ্তর বদল করেছেন। বিশ্ব ব্যাংকের অধীনে ইউজিসিতে চলা চাড়ে চার হাজার কোটি টাকা হিট প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা আটছেন। এরই মধ্যে ইউজিসি প্রশিক্ষণ বিভাগে এসে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা শুরু করেছেন।

ইউজিসি সূত্র বলছে, এই কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাবেক সদস্য। নাম মনির উল্লাহ। কিন্তু এখন নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে জাহির করে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া ওয়ার্ক স্টেশন ত্যাগ করে প্রশিক্ষণের নামে ব্যাচ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মাসের পর মাস ঘুরে বেড়িয়েছেন। অথচ প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তার যোগ্যতা না থাকার পরও দিনের পর দিন কমিশনের সদস্য প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেনকে ম্যানেজ করে এই কাজ করেছেন। অথচ এই কর্মকর্তা এর আগেও দুর্নীতির দায়ে একাধিকবার বিভাগীয় শাস্তি পেয়েছেন। তবে তা ছিল গুরুপাপে লঘু দন্ড।এসব অভিযোগের বিষয়ে মনির উল্লাহর সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের। তিনি জানান, এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে হলে আপনাকে ইউজিসিতে আসতে হবে। ফোনে বলে বোঝানো সম্ভব না। নিজের একাডেমিক যোগ্যতার বিষয়ে তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) থেকে পাস করেছেন বলে জানান। পরে এই প্রতিবেদক ইউজিসিতে কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের নামে যে অর্থ আয়ের কথা বলা হচ্ছে তা বিধি অনুযায়ী আয় করেছেন। সাবেক সদস্যের প্রচার ও প্রসারে নিজের কর্ম তিনি অকপটে স্বীকার করেন। তবে এটি চাকরিবিধিমালার সঙ্গে যায় কী না এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসার সুযোগ নেই। কিন্তু ইউজিসির এই কর্মকর্তা দীর্ঘ ১৮ বছর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। যার তথ্য প্রমাণ জনকণ্ঠের হাতে রয়েছে। নথিপত্র ঘেটে দেখা যায়, নিরাপদ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, বায়োগ্যাস প্লান্টসহ নানা কিছু উৎপাদন করেন। যার প্রচারণা নিজের ফেসবুকেই তিনি দিয়েছেন। এর  একাধিক স্ক্রিনশট জনকণ্ঠের হাতে রয়েছে।

ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মনির উল্লাহ ইউজিসির সাবেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। সেকারণে সাজ্জাদের নানা প্রচারণা ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে লাইভে প্রচার করতেন। ইউজিসির পক্ষ থেকে শত শত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যার মাত্র ১৮টি প্রশিক্ষণেই ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা সরকারি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন। যে ১৮টি চেকের কপিই জনকণ্ঠের হাতে রয়েছে। দুই একটি চেক পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪টি ও ২০ ফেব্রুয়ারি ৩টি মোট সাত সেশনে ইউজিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ই-নথি, ডি নথি, রিফ্রেশার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের রিসোর্স পারসন বাবদ সেশন সম্পন্ন করেন। প্রতি সেশনে ২ হাজার টাকা করে মোট ১৪ হাজার টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন। এক্ষেত্রে আয় কর্তন হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ হারে।

একইভাবে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ১টি ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ৪টি মোট ৫ টি সেশনে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রতি সেশনে ২ হাজার করে তিনি ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এরপরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ১ টি ও ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি ৪টি কোর্সের বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ৫টি সেশনে তিনি ১০ হাজার টাকা সরকার থেকে উত্তোলণ করেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বেতনের পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তিনি প্রশিক্ষণ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন।

সর্বশেষ হিট প্রকল্পের প্রশিক্ষণে যুক্ত হওয়ায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সাড়ে তিনশো কোটি টাকা প্রশিক্ষণ খাতে যে ব্যয় হবে তার পুরোটায় নিজের পকেটে ঢোকানোর বন্দোবস্ত করছেন বলেও অনেক কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন।

এছাড়াও  পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে অতিরিক্ত পরিচালক পদে মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূইয়া, অস্ট্রেলিয়ান পাসর্পোটধারী (পাসর্পোট নং চই৪১৫৪৭৫৯)। যা সরকারি চাকরি আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি সর্বোচ্চ দূর্ণীতিগ্রস্থ ও বৈষমবাদ কট্ররপন্থী আওয়ামীলীগ ইউজিসির সাবেক সচিবের আর্শিবাদে অবৈধভাবে ই্উজিসিতে অদ্যাবধি চাকুরি করে চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ জনকণ্ঠকে জানান, এমন অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। মনির উল্লাহকে অন্য দপ্তরে সরিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এতটুকু আশ্বস্ত করছে চায়, ইউজিসিতে দুর্নীতি অনিয়মের কোন ঠাঁই হবে না। আমরা সর্বোচ্চ ক্লিন ইমেজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকবো।

শহিদ

×