ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

’মাঝে মাঝে মনে হয় সুইসাইড করে ফেলি’

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

’মাঝে মাঝে মনে হয় সুইসাইড করে ফেলি’

'মাঝে মাঝে যখন ডিপ্রেশনে চলে যায় মনে হয় সুইসাইড করে ফেলি। এটা শুধু আমার না আমাদের ডিগ্রির প্রায় সাড়ে তিনশো জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছি সবার এমন চিন্তা আসে। এখন পর্যন্ত যেই প্রশাসনই এসেছে শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছে। হ্যাঁ- তোমাদের ক্লাসরুম ফ্যাসিলিটিজ, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ দেওয়া হবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সব সমস্যার সমাধান করা হবে। এসব আশ্বাস পর্যন্তই।' বলছিলাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আরো বলেন, 'দশ বছরে আমাদের মাত্র তিনটা ব্যাচ বের হয়েছে ১৪, ১৫ ও ১৬ ব্যাচ। আপনারা জানেন আমাদের ডিগ্রি ৫ বছরের সেখানে ৬ বছর লাগলেও মানা যায় কিন্তু লাগছে ৮ বছর। ১৪ ব্যাচের সময় লেগেছে সাড়ে সাত বছর, ১৫ ব্যাচের আট বছর, ১৬ ব্যাচেরও এইরকমই সময় লেগেছে। আমরা ১৮ ব্যাচের আমাদের ব্যাচমেট গুলো সবাই বের হয়ে গেছে আর আমাদের এখনো ৫ লেভেল ১ সেমিষ্টার চলছে। 
আমার বাবা একজন কলেজের পিয়ন, আমি ১৮ সালে এসে ভর্তি হয়। নিজে টিউশনি করে, কষ্ট করে কোনমতে নিজের পড়ালেখার খরচ এতদিন চালাচ্ছি। আমাদের ডিগ্রি টি এমনিতেও অনেক ব্যয় বহুল। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের জন্য আট বছর পড়াশোনার খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব। দীর্ঘ সেশনজটের ভয়াবহতায় মানসিক চাপ নিতে না পেরে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন হাল ছেড়েও দিয়েছে।'

আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, 'আমাদের ডিপার্টমেন্টের মোট ৮ জন শিক্ষক এদের মধ্যে ৩ জনই শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ৫ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে সাতটি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। সামনে আরো একটা ব্যাচের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। ৫ জন শিক্ষকই তাদের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন। আমাদের প্রশ্ন হলো যেখানে শিক্ষক সংখ্যা কম সেখানে শিক্ষা ছুটি কেন দিতে হবে? আমাদের কি সময়ের দাম নাই?'

সেশনজটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানায়, 'শুধু শিক্ষক সমস্যায় না ক্লাসরুম এবং সরঞ্জাম সংকটেও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যান্য ডিগ্রির থেকে আমাদের টেবিল চেয়ার ল্যাব রুম সব কিছুই আলাদা। আমাদের ডিগ্রির দশ বছর হয়ে গেলেও এখনো আমাদের পড়াশোনা প্র্যাকটিক্যাল ল্যাবের জন্য আসবাব পত্র, ল্যাব টেকনিশিয়ানও নিয়োগ দেওয়া হয় নি। নবনির্মিত দশতলা ভবন নির্মাণের পূর্বে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিল দশ তলা বিল্ডিং হবে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য সেখানে আমরা পর্যাপ্ত স্পেস পাবো আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হবে। কিন্ত আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে। 

দশতলা ভবন চালু হয়েছে কিন্তু আমাদের জন্য না। আমাদের ও স্পেস দিয়েছে নাম মাত্র। তার পরিবর্তে দিয়েছে পুরাতন অন্ধকারাচ্ছন্ন একাডেমিক ভবন দুই পুরোটা। সেখানে আমাদের রুম রয়েছে কিন্তু ফ্যাসিলিটিজ নাই সেগুলো দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বাজেট দেয় নি। কিন্তু আমাদের সময় তো বসে নেই। ওয়াজেদ ভবনে আমাদের যে দুইটা রুম ছিল সেগুলোও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, 'ক্যাম্পাসে সবসময় অবহেলিত ডিপার্টমেন্ট যেন আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান এর সময়কালে আমরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে গেলে আমাদের তাচ্ছিল্য করেছে। সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ এরকমও আমাদের বলেছে যে বেশি কথা বললে ডিপার্টমেন্টই বন্ধ করে দিবো।'

এ বিষয়ে আর্কিটেকচার বিভাগের চেয়ারম্যান এস. এম. নাঈম হোসেন মিথুন বলেন, 'স্থাপত্য বিভাগের ডিগ্রি পাঁচ বছরের এবং ১৯৬ ক্রেডিট। আমাদের বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে ৩ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। আমাদের বর্তমানে ৭ টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। ক্লাস ও ডিজাইন স্টুডিও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রায় ৩৮ জন শিক্ষক প্রয়োজন। 

একটা ব্যাচের ডিজিটাল স্টুডিওর জন্য দুইজন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের রয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষক। তাছাড়া আমাদের ক্লাসরুম ও ডিজাইন স্টুডিও টিএসসি, ওয়াজেদ ভবন এবং একাডেমিক ভবন ২ এ বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। এজন্য শিক্ষকরা চাইলেও দুইটা ব্যাচের ডিজাইন স্টুডিও সমান্তরালভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। 

যদি আমরা একটা ভবনে থাকতে পারতাম তবে সেশনজট অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার একাডেমিক ভবন ২ সংস্কার এর জন্য বলেছি। বিগত প্রশাসনের সময় আমরা শুধুমাত্র ডিজাইন স্টুডিও করার জন্য দুইটা রুমের ভেতরর দেয়াল ভেঙে রুমগুলো বড় করার আবেদন করা হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান অনুমোদন দিলেও প্রশাসনিক জটিলতায় সেটিও থমকে আছে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে প্রশাসনের ধীর গতি তো রয়েছেই।'

ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মফিজউল ইসলাম বলেন, 'স্থাপত্য বিভাগের সেশনজটের পেছনে শিক্ষক সংকট মূখ্য কারণ। প্রশাসনের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীর গতির কারণে বিগত দুইটা বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক যোগদান করেননি। তবে আমরা গেষ্ট টিচার এর মাধ্যমে তত্ত্বীয় বিষয়গুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।ক্লাসরুম ও ডিজিটাল স্টুডিও সংকট দ্রুত সময়ে কেটে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ২ এর কিছু সংস্কার কাজ হয়ে গেলে এই সংকট কেটে যাবে।'

 এসআর

×