ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

জাবির নতুন ছাত্রী হলে রুম দখলের অভিযোগ, দিনভর নবীনদের ভোগান্তি

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২৩:৩৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জাবির নতুন ছাত্রী হলে রুম দখলের অভিযোগ, দিনভর নবীনদের ভোগান্তি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নবনির্মিত বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৫২ ব্যাচের একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তালা মেরে রুম দখলের অভিযোগ উঠেছে। ফলে আবাসিক হলে উঠতে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের দিনভর অপেক্ষা ও ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

 

 

 

অপরদিকে ওই হলের দুই শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পালটা অভিযোগ করে জানান, হল প্রভোস্ট তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। ছাত্রী হলে বাইরের মানুষ যে যেভাবে পারছে প্রবেশ করছে ও ছেলেরা হলে প্রবেশ করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা হলে প্রবেশের প্রমাণ মিললেও, উত্যক্তের বিষয়ে কোনো প্রমাণ কিংবা উত্যক্তের শিকার কোনো ভুক্তভোগীর সন্ধান মিলেনি।

 

 

এর আগে, শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯ টা থেকে বরাদ্দকৃত আসনে উঠার জন্য হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তবে বরাদ্দকৃত কক্ষের তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য দীর্ঘ সারি ও পরে কক্ষে গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই তালা মারা দেখতে পান।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের আসন বুঝে নেয়ার প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ শেষে ৬ষ্ঠ তলায় গিয়ে কক্ষ তালাবদ্ধ দেখতে পান। ষষ্ঠ তলায় অন্তত ২০টি কক্ষ আগে থেকেই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানায় নবীন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষী না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককেই তোষক—বালিশ কাঁধে হলের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। সুযোগ পেয়ে অনেকেই হলের উপরতলায় নারী শিক্ষার্থীদের কক্ষে চলে যান। এ নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দুইটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

দর্শন বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুন নাহার লাবনী পুষ্পিতা ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ ফেসবুক গ্রুপে অভিযোগ করে লিখেন, তারামন বিবি হলে আজ ৫৩ উঠাতে তাদের সাথে অনেক গার্ডিয়ান এসেছে। ছেলে মানুষও ঢুকে গেছে। তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন তলা ঘুরে দেখেছে এবং মেয়েদের বাজে ভাষায় টিজ করছে।’ তবে ঠিক কোথায় বা কাকে ‘টিজ’ করা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে তার বন্ধু ও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি তখন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুন নাহার বলেন, ‘৫৩ ব্যাচ তো একেবারে নতুন। তাদের গার্ডিয়ানরা যে যেভাবে পেরেছে, ঢুকে গেছে। হলের প্রশাসন তাদের কিছু বলে নাই; অবজেকশন দেয়ার পরও আমলে নেয় নাই। গার্ডিয়ানরা তো চাইলেই মেয়েদের হলে এভাবে ঢুকতে পারেন না।’

নারী শিক্ষার্থীকে টিজ করার তথ্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘হলের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আমি এটা জানতে পেরেছি।’ ঠিক কে উত্যক্ত করেছে তা জানেন না তিনি। তবে রুম দখল করার বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। 

নিশি ইসলাম নামে দর্শন ৫২ ব্যাচের অপর এক শিক্ষার্থী একই পোস্ট হুবহু কপি-পেস্ট করে ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ গ্রুপে পোস্ট করেন। এর আগে ‘জাবির সকল সংবাদ’ গ্রুপেও সকালে পরিচয় গোপন করে হুবহু একই পোস্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন হল বরাদ্দ দেয়ার সময় প্রভোস্টের কাছে উপরতলার ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম তলার কক্ষগুলো বরাদ্দ চেয়েছিলেন ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তবে নিজেদের ইচ্ছেমতো বরাদ্দ না পেয়ে তারা আজ সকালেই আগেভাগে অন্তত ২০টি কক্ষে তালা মেরে চলে যান। পরে এ নিয়ে হল প্রভোস্টের সাথে কয়েক দফা বাকবিতণ্ডায় জড়ান তারা। সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার হলে আসতে অনুরোধ জানানো হলেও তারা আসেননি। পরে বিকাল ৫টায় দুই প্রোভিসি, প্রক্টর ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য প্রভোস্টরা এসে অনুরোধ করলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি হন। এসময় আবার কক্ষ দখলের কারণ হিসেবে বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে শিক্ষকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান তারা। রাত ৮ টায় অবশেষে ‘তালা মারার ঘটনায় ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে’ মর্মে মুচলেকা দেয়ার পর ৬ষ্ঠ তলায়ই তাদেরকে অবস্থান করতে দেয় হল প্রশাসন।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘এটা সুস্পষ্ট নিয়মের লঙ্ঘন। অনিয়মের মধ্য দিয়ে তারা হলে উঠতে পারবে না। তারা দাবি জানাতে পারেন, রুম এভাবে দখল করতে পারেনা। এটা তো আগের সময় না, এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এখন কোন অনিয়ম চলবে না।’

এ বিষয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক আবেদা সুলতানা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অবশ্যই হল প্রশাসনের কথা শুনতে হবে। তারা এ কাজ করে খুবই অন্যায় করেছে।’

ফুয়াদ

×