ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

ঠিকঠাক অফিস করছেন না কর্মকর্তারা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে মামলা আতঙ্ক

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে মামলা আতঙ্ক

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কশিশনের অন্তত ১৩ কর্মকর্তার ঘাড়ে মামলার ভার। অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। কেউ আবার হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) থেকে সাবেক সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আছেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান থেকে সব সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনো রয়েছেন সাবেক সচিব,পরিচালক ও উপপরিচালক পদের কর্মকর্তারা। বদল করা হয়েছে তাদের দপ্তর। 

তবে এসব কর্মকর্তার অধিকাংশই অফিস করছেন না। কোন রকম অফিসে এলেও হাজিরা দিয়ে  চলে যাচ্ছেন। ফলে উচ্চ শিক্ষার তদারকি প্রতিষ্ঠানে যে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। একাধিকদিন ইউজিসির অফিসে যেয়ে এমন অবস্থায় দেখা গেছে।

সরেজমিন ইউজিসিতে দেখা যায়, অধিকাংশ কর্মকর্তার কক্ষে তালা ঝুলছে। তাদের অফিস সহকারীদের কাছে শুনলেও কোন সদুত্তর নেই। ব্যক্তিগতভাবে এসব কর্মকর্তার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তারা ধরছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, যারা অফিস করছেন না তাদের অনেকেই অসুস্থতার কারণে বাসায় আছেন। দুই একজন অফিসে আসছেন কিন্তু তাদের কাছে কর্মপরিবেশ উপযুক্ত মনে হচ্ছে না।

অফিসে না আসা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের। তারা জানান, শিক্ষকতার মধ্যে এসেও হত্যা মামলা দায় কষ্টদায়ক। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের কারও বিরুদ্ধেই নূন্যতম সংশ্লেষ নেই। এমন অবস্থায় অফিসে আসা ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করাটা পীড়াদায়ক। গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তারা বলেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কতো রয়েছেই। সব কিছু বিবেচনা করেই কাজ করতে হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হলে আইনী সাহায্য করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব কর্মকর্তাদের পক্ষে ইউজিসি কোন আইনী সাহায্য করবে  না বলে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে চেয়ারম্যান দপ্তরের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা জানান, এই মামলার মেরিট নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই। মামলা মোকাবিলায় কমিশন কোন সাহায্য করবে না। ফলে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে লড়তে হবে। কারণ সম্পর্কে দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিই এর জন্য প্রধান দায়ী। এছাড়া আর কিছু না।

সূত্র বলছে, সরকার পতনের পর অনেক কর্মকর্তা নিরুদ্দেশ ছিলেন। তারা দীর্ঘ সময় অফিসে আসেননি। অফিসের আসার পর সহকর্মীদের ক্ষোভের শিকার হন। এরপর কিছু কর্মকর্তা আসলেও তা নিয়মিত নয়।

অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাঝপথে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

ইউজিসির সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় এই আদেশ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আন্দোলন বন্ধ করতে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সে সময় শিক্ষাবিদরা জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইনে চলে। এভাবে ইউজিসি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে পারে না। যা নিয়ে সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ইউজিসির বর্তমান ও সাবেক যেসব কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক সচিব ফেরদৌস জামান, সাবেক সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. সাজ্জাদ হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. জামিনুর রহমান, মো. ফজলুর রহমান, উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ, মো. গোলাম দস্তগীর, ইউসুফ আলী খান ও অতিরিক্ত পরিচালক শাহীন সিরাজ, সহকারী পরচিালক ফরিদুজ্জামান এবং মো. শরিফুল ইসলাম।

মামলার কারণ হিসেবে ইউজিসির সাবেক সদস্য এবং কর্মকর্তাদের এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অন্যায় আদেশ জারি, আন্দোলন দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা, উসকানি, ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করে সংঘটিত অপরাধে সহযোগী হিসেবে কাজ করার কথা বলা হয়। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সশরীরে এবং ফোনে হুমকি প্রদান করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া এবং উসকানিদাতা এবং সংঘটিত অপরাধে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ জনকণ্ঠকে জানান, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন বলে শুনেছি। অফিস করছেন না এমন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অবশ্যই খোঁজ নেওয়া হবে। 

ইউজিসির স্বাভাবিক কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউজিসির ৫ জন সদস্য ছিলেন। তাদের সবাই পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে দুইজন সদস্য নতুন যোগদান করেছেন। বাকি ৩ জনও যোগ দিবেন। যেহেতু টিমওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের কাজ করতে হয়, সব সদস্যরা যোগদান করলে কাজের গতিও ফিরবে।

এসআর

×