ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

অদম্য তূর্য, দৃষ্টি ছাড়াই এইচএসতিতে পেলো জিপিএ ৪.৫৮

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

অদম্য তূর্য, দৃষ্টি ছাড়াই এইচএসতিতে পেলো জিপিএ ৪.৫৮

মো. ইনতেসার ইসলাম তূর্য

দুই চোখে ছানি নিয়েই জন্ম হয় মো. ইনতেসার ইসলাম তূর্য’র। পরে গ্লুকোমা, ম্যানিনজাইটিসসহ নানান রোগে ভোগে এক চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারায়। অন্য চোখে ক্ষীণ দৃষ্টি থাকলেও তা পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখার জন্য অপর্যাপ্ত।

চিন্তিত বাবা-মা নিয়ে যান দেশের বড় বড় চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু কিছুতেই ভালো খবর না পেলেও খারাপ খবর দেন তারা। দৃষ্টিশক্তি না থাকার পাশাপাশি অন্য আর দশটা শিশুর মতোও নয় তূর্য। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, উজ্জ্বল গৌরবর্ণের তূর্য একজন বিশেষ শিশু। বাবা-মায়ের কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। ভেঙ্গে পরেন তারা। কিন্তু তূর্য’র মধ্যে যেনো জন্ম হয় নতুন আরেক শিশুর। যে নিজের চেষ্টায় অদম্য। স্থির করে ফেলে জীবনের লক্ষ্য। সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে প্রাথমিকের গন্ডি। শ্রুতিলেখকের সহায়তায় প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ অর্জন করে। একে একে সাফল্য আসে জেএসসি, এসএসসির ফলাফলেও। সর্বশেষ একই উপায়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অর্জন করে জিপিএ ৪.৫৮। 

ছেলের এমন সাফল্যে তাই খুশির পানি বাবা মো. রেজাউল ইসলাম এবং মা মোছা. ইসরাত জাহানের চোখে। চোখের পানি মুছতে মুছতে ইসরাত জাহান বলেন, যে ছেলের বেড়ে উঠা নিয়ে আমরা রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। সেই ছেলে চোখের আলো না থাকলেও হার মানিয়েছে সব আঁধারকে। আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। ছেলের ভবিষ্যত যেনো আলোতে ভরে উঠে সেই দোয়া চাই সকলের কাছে।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে বেড়ে উঠা তূর্য’র জিপিএ ৫ নিয়ে এসএসসি পাশ করে আটঘরিয়ার শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। একই উপজেলার খিদিরপুর ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৫৮ পেলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে বেড়ে উঠা তূর্য। জিপিএ ৫ পাবে এই বিশ্বাস থাকলেও না পাওয়ায় কিছুটা মন খারাপ তূর্য বলে, বাবা-মাসহ পরিবারের সবার এত সহযোগিতা পাই আমি প্রতিটা ক্ষেত্রে যে আমার মনেই হয় না আমার চোখে দৃষ্টি নেই। তাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই। আজীবন লেখা-পড়ার মধ্যেই থাকতে চাই।

স্বপ্না / রিয়াদ

×