ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

হাবিপ্রবিতে অতিরিক্ত দায়িত্বের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১২, ৮ অক্টোবর ২০২৪

হাবিপ্রবিতে অতিরিক্ত দায়িত্বের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: জনকণ্ঠ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) একই ব্যক্তির একাধিক প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি এক হলের হল সুপার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বের পরেও আরো অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। 

দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের শিক্ষকদের থেকে প্রশাসনিক পদগুলোর সংখ্যায় বেশি।

ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো হাবিপ্রবিতেও সকল প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এরপর প্রশাসনশূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে ৪ সেপ্টেম্বর সকল ডিনগণের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব প্রদান করা হয় কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. হাসান ফুয়াদ এল তাজকে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল করতে প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দেন তিনি। প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের সময় বিগত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময় সুবিধাপ্রাপ্ত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে এ যাবৎকালব্যাপী বঞ্চিত শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ২০০৯ সালের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সুযোগ পায়।

নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সম্প্রতি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। একইভাবে পোস্ট গ্রাজুয়েট অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ শেখ রাসেল হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। একই হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আরেক হল তাজউদ্দীন আহমদ হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. শোয়াইবুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবুল কালাম। 

একইভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শেখ রাসেল হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান হাফিজ। তাজউদ্দীন হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আইকিউএসি এর অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মোমিনুর রহমান ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শেখ সায়েরা খাতুন হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মহিদুল হাসান। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সহকারী হল সুপারের হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন যানবাহন ও যন্ত্র মেরামত শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল বারী। 

আইভী রহমান হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লাইব্রেরিয়ান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসানুল কবির ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. মো. আরিফুজ্জামান। শেখ সায়েরা খাতুন হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্ল্যানিং, ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়ার্কস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বাহাদুর। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং এর সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মারুফ আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হল সুপার জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমাদের হল পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট আর্থিক ও প্রশাসনিক কমিটি প্রয়োজন। এছাড়াও কর্মচারীদের বেতনসহ হলের যাবতীয় খরচ পরিচালনার জন্য দুইজন ব্যক্তির সিগনেচার প্রয়োজন, একজন হল সুপার ও আরেকজন সহকারী হল সুপারের। হলের কর্মচারীদের তিন মাসের মত বেতন আটকে ছিল এছাড়াও হলের যাবতীয় সংস্কার কাজ ও আটকে ছিল। 

এমতবস্থায় হল গুলো সকল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যার জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষকই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সময় সুবিধাপ্রাপ্ত নয়তো নিয়োগ প্রাপ্ত অথবা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এক্ষেত্রে বিতর্ক এড়াতে বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষকদের থেকে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

দেখা যাচ্ছে, আমাদের সংখ্যার তুলনায় প্রশাসনিক পদগুলোর সংখ্যায় বেশি যার কারণে একজনকে একাধিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যারা আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত কিন্তু সেসময় কোনো দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলনা বা সুবিধাভোগী ছিল না তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করলে সামনে লেকচারার সহ অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর জানায়, হল পরিচালনার প্রয়োজনেই জরুরী ভিত্তিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও আমি এখনো সহকারী হল সুপার পদে জয়েন করি নাই।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই, এ বিষয়গুলো ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসে আমি শুধু সিগনেচার করি। আমি এখানে ডাকপিয়ন শুধু। এ বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. হাসান ফুয়াদ আল তাজ বলেন, হলগুলোর যে অর্থ বরাদ্দ সেটা হল সুপার একা তুলতে পারবে না এজন্য হল সুপার ছাড়াও আরো একজন সহকারী হল সুপারের সিগেনচার লাগবে। এখন কি তাহলে আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের দায়িত্ব দিব যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

 

এসআর

×