ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

ইবিতে ফ্যানে ঝুলিয়ে পিটাতে চাওয়া সেই শিক্ষকের অপসারণের দাবি

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইবিতে ফ্যানে ঝুলিয়ে পিটাতে চাওয়া সেই শিক্ষকের অপসারণের দাবি

অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম

ক্লাস এটেন্ডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত শিক্ষক ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম। সোমবার বিকেল তিনটায় উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতকালে বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে অপসারণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা, শ্রেণিকক্ষে সবার সামনে ছাত্রীদের ‘নষ্টা ও বাজারের মেয়ে’সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মেয়েদের নম্বরে কল দিয়ে বিরক্ত করা, ফেইক আইডি দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথন রেজাল্ট টেম্পারিং, পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য, ফেল করানোর ভয় দেখানো, মানসিক অত্যাচারসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের হ্যানস্তা করতেন হাফিজ।


শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভিন্নভাবে হ্যানস্তার পাশাপাশি এটেন্ডেন্সের কথা বলে হাফিজ স্যার জোর করে আমাদের ছাত্রলীগের মিছিল ও প্রোগ্রামে পাঠাতো। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করার কারণেও অনেক শিক্ষার্থীকে সরাসরি ইনবক্সে হুমকি দেন। উনি সবসময় ছাত্রলীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। আন্দোলনের পরে অর্থাৎ ৫ অগাস্টের পরেও ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছে। আমাদের এক বন্ধু ছাত্রলীগ করতো। আমরা তাকে বিভাগের ক্লাসে আসার আগে ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম। সেখানেও স্যার হুমকির সুরে বলে, ‘তোমরা পারলে ক্ষমা চেয়ে দেখাও’। বিভিন্ন সময় আমাদের একাডেমিক জীবন শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেয়।


একই দাবিতে দুপুর ১টার দিকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রধান ফটকে তালা দেন। এতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও শৈলকূপা গামী বাসগুলো আটকে যায়। পরে উপাচার্য তাদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানালে ফটক খুলে দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্য তদন্ত কমিটি করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।


বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী, বিভাগটির সভাপতি আতিফা কাফিসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আঁখি আলমগীর বলেন, তিনি ফেইক আইডি দিয়ে আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় চ্যাটিং করতেন। শ্রেণিকক্ষে আমার পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। পরে আমাকে জীবননাশের হুমকিও দেন ওই শিক্ষক। আমি তার বিচার চাই।


২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মিরাজ হাসান বলেন, হাফিজ স্যার আমাকে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও নেশা দ্রব্যের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ পরে আমি রাজি নাহলে তিনি আমার উপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।


বিভাগের ছাত্রী মৌমিতা তাসনিয়া রহমান জানান, তিনি আমাদের ফেইসবুক ঘাটাঘাটি করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন স্ক্রিনশট নেয়ি আবার ক্লাসে সেগুলো নিয়ে বাজেভাবে অপমান করে। হাফিজ স্যার আমাদের বলে তোরা ফেইসবুকে ছবি দেও কেন? কাস্টমার ধরার জন্য? তিনি আমাদের এক বান্ধবীর তথ্য আরেক বান্ধবীর থেকে নেয়। সময় অসময় মেসেজ দেয়। বিভাগের তথ্য পাওয়ার জন্য স্পাই রাখে প্রতিটি ব্যাচে।


বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া হোসেন জানান, আমি প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতাম। আমি কি পোশাক পড়বো, কোথায় যাবো, কি খাবো, সেই স্বাধীনতাটুকু তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন। দুইদিন বিভাগে না যাওয়ায় আমাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পিটাতে চেয়েছেন। বিভাগের মেয়েদের ওপেনে গালিগালাজ করেন। তিনি মেয়েদের অশ্লীল ভাষায় সম্বোধন করেন। যে স্যারের গুনগান গাইবে সে ইন্টার্নালে পাবে ২৭ আর আমি পাবো ১৭। আমার বন্ধুদেরকে রাতের বেলা ডেকে নিয়ে আমার  বিরুদ্ধে বদনাম করা হয়।


আরেক ছাত্র হৃদয় জানান, একজন শিক্ষক কখনো অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে মেন্টালি অ্যাটাক করতে পারেনা না। কিন্তু তিনি সকল শিক্ষার্থীর সাথে, কোথায় থাকবো, কোথায় আড্ডা দেবো, কোন হলে থাকবো, এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। আমাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়। পরে তার মাধ্যমে হলে উঠার জন্য বলে। আমাকে লাল পানি দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আতিফা কাফি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। উপাচার্য স্যার তদন্ত কমিটির আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তারা সকল অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। সেখানে আপনারা সবাই সবার ব্যক্তিগত সমস্যা শেয়ার করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

ফুয়াদ

×