ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

কুষ্টিয়া-ইবি সড়ক বেহাল, সরকার পরিবর্তনে টেন্ডার বাতিল

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ৫ অক্টোবর ২০২৪

কুষ্টিয়া-ইবি সড়ক বেহাল, সরকার পরিবর্তনে টেন্ডার বাতিল

সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে মহাসড়ক

সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া থেকে ইসলামী  বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পর্যন্ত মহাসড়কের ১৫ কিলোমিটার অংশ। ক্লাস-পরীক্ষা পুরোদমে শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন। সড়কে নিত্যদিন পিছু ছাড়ছে না ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তৈরী হয় দীর্ঘ জানজট। তাছাড়াও সড়কে যাতায়াতকারী দুরপাল্লার যাত্রী ও মালবাহী গাড়িচালকরা বিপাকে পড়েছেন। খানা-খন্দে ভরা মরণফাঁদে পরিণত হওয়া এই সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে এই সড়ক সংস্কারে টেন্ডার হলেও সরকার পরিবর্তনের পরে তা বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কুষ্টিয়ার সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। এই টেন্ডারগুলো আবারো নতুন করে করতে এবং কাজ শুরু করতে অন্তত ডিসেম্বর লেগে যাবে এবং আগামী বছরের মার্চ মাসে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতর সূত্রে, কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৪-১৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে ১১ মাইল থেকে ক্যাম্পাস ফটক পর্যন্ত অন্তত ৮ কিলোমিটার সড়ক যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়কে প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতায়াত করেন। তাদের জন্য অন্তত ৩৫টি বাস বিভিন্ন শিফটে চলাচল করে। ক্লাস-পরীক্ষা চালু হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। তাছাড়া গাড়ির মেরামত খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে।গাড়িচালকদের অভিযোগ, এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই চলাচলের অনুপোযোগী। গত তিন মাস ধরে আরো বেহাল দশা। রাস্তা এমন হওয়ার কারণে রেগুলার গাড়ি নষ্ট হয়। ধুলাবালির কারণে রাস্তা চোখেই দেখা যায় না। আর বৃষ্টি হলে খানাখন্দ দেখা যায় না। তাই গাড়ির চাকা খাদে বেঁধে যায়। রাস্তায় কাদা হয়ে ব্রেক ঠিকভাবে কাজ করে না। রাতের বেলা আরো বেশি রিস্ক থাকে। খানাখন্দে ভরা সড়কে টায়ারে ইটের টুকরা ঢুকে টিউব-টায়ার নষ্ট হয়। এছাড়া গাড়ির এক্সেল, ব্রেক, টায়ার পাংচার হওয়া সহ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়। গাড়িরও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়। এছাড়াও মালবাহী গাড়িগুলোর মালামাল নষ্ট হয়ে যায় বলেও অভিযোগ তাদের।শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ৪৫ মিনিটের রাস্তা অনেক সময় প্রায় এক ঘন্টাও লেগে যায়। যানজট বাঁধলে আরো বেশি সময় লাগে। ফলে সকালের ক্লাসে সময়মতো উপস্থিত না হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি করে খরচ চালান তাদের ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া যেতে হয়। ফলে যাতায়াতের পিছনেই অনেক সময় চলে যায়। তাছাড়া গাড়িতে অসুস্থ কেউ থাকলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। রাস্তা ভাঙলে নামমাত্র সংস্কার করে। কয়েকদিন পর আবার যেই লাউ সেই কদু। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনায় সময়ও রাস্তার এই অবস্থা ছিল। আন্দোলন করার পর সড়ক সংস্কার হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে গেলে কী পরিস্থিতি হতে পারে সেটা বাংলাদেশের মানুষ জানে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রত্না রাণী কুন্ডু বলেন, কুষ্টিয়ায় টিউশনি করাতে যাই নিয়মিত। তবে রাস্তার যে অবস্থা যাওয়া-আসার পথে খুব আতঙ্কে থাকি। হুট করে খাদে পড়লে মনে হয় এই বুঝি বাস উল্টে যাবে! ডাবল ডেকারে উঠলে তো আরো বেশি ভয় লাগে। লক্কর-ঝক্কর রাস্তায় যেতে আসতে দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়ে যায়। ঝাকি লাগে, কষ্ট হয়। হাই স্পিডে গাড়ি আসলে মনে হয় লেগে যাবে। বড় কেনো দুর্ঘটনা হওয়ার আগেই সড়কটির সংস্কার জরুরি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, কুষ্টিয়াতে বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। তাদের চরম ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রশাসন অতি দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি। শিক্ষার্থীদের এভাবে ঝুঁকিতে না রেখে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী লিটন আহমেদ খান বলেন, এবছর সড়কগুলো সংস্কারের জন্য টেন্ডার অনুমোদন পেয়েছিল। তবে আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তনের পর আগের টেন্ডারগুলো বাতিল হয়ে গেছে। আমরা নতুন উপদেষ্টার কাছে পুনরায় টেন্ডারের জন্য আবেদন পাঠিয়েছি যা আগামী মাসে মিটিংয়ে পাশ হলে সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে। তবে টেন্ডার হয়ে গেলেও কাজ শুরু করতে করতে ডিসেম্বর হয়ে যাবে। সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে অন্তত আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে। 

 

রাজু

×