ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

আগের সেমিস্টার পাশ না করেও পরবর্তী একাধিক সেমিস্টারে পড়াশোনা হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৫:৫৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আগের সেমিস্টার পাশ না করেও পরবর্তী একাধিক সেমিস্টারে পড়াশোনা হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ইকোনমিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী রূপা (ছদ্মনাম)। ২০১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী হলেও রূপা (ছদ্মনাম) ২ বছর গ্যাপ দিয়ে ২০১৯ সালে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের সাথে তার স্নাতক পড়াশোনা শুরু করে। 

এর পর প্রথম লেভেলের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার, দ্বিতীয় লেভেলের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার এবং তৃতীয় লেভেলের প্রথম সেমিস্টার পার করে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সেমিস্টার ফাইনালের তৃতীয় পরীক্ষায় পরীক্ষা দিতে না দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক রোজিনা ইয়াসমিন লাকি তাকে জানায়, দ্বিতীয় লেভেলের দ্বিতীয় সেমিস্টার উত্তীর্ণ হতে পারেন নি রূপা (ছদ্মনাম)। 

এর ফলে তার তৃতীয় লেভেলের দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না তিনি। এদিকে রূপার (ছদ্মনাম) রেজাল্ট শিট থেকে দেখা যায় তিনি পূর্ববর্তী সেমিস্টার অর্থাৎ তৃতীয় লেভেলের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় এক সাব্জেক্টে ফেল করলেও সেমিস্টার পাশ করেছেন। আর দ্বিতীয় লেভেলের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় ভাইভাসহ ৬ টি কোর্সের ৩ টিতেই ফেইল করেন তিনি। ডিন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী কোনো সেমিস্টারে ৪০ শতাংশের বেশি ক্রেডিট কোর্সে ফেল করলে তিনি সেমিস্টার উত্তীর্ণ হতে পারবেন না। পরবর্তী বছর আবার তাকে এই সেমিস্টারে পরীক্ষা দিয়ে নূন্যতম ৬০ শতাংশ ক্রেডিট কোর্সে পাশ করতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী রূপার তৃতীয় লেভেল চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবুও রূপা তৃতীয় লেভেলের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনালেও অংশ নেয়। কিন্তু কিভাবে সম্ভব?

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্বের কারণে এরকম টা হয়ে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগেই সেমিস্টার ফাইনাল এর রেজাল্ট প্রকাশ হয় পরের সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার আগে মুহুর্তে। অনেক সময় পরের সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার এনরোলমেন্ট হয়ে যাওয়ার পরেও রেজাল্ট পাবলিশ হয়। পরের সেমিস্টার ফাইনালের পরীক্ষা শুরুর দিন আগের সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী রুপা (ছদ্মনাম) জানায়, লেভেল টু সেমিস্টার টু পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশে দেরি হওয়ায় ও এনরোলমেন্ট এর ডেট দেওয়ায় আমিও সবার সাথে পরের সেমিস্টার ফাইনালের জন্য এনরোলমেন্ট করে ফেলি পরবর্তীতে লেভেল থ্রি সেমিস্টার ওয়ানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। লেভেল টু সেমিস্টার টু এর রেজাল্টে ফেল থাকলেও আর সেভাবে লক্ষ্য করি নাই পরে আবার ফেল করা কোর্স গুলোই শর্ট পরীক্ষা দিয়ে দিব বলে। পরবর্তীতে লেভেল থ্রি সেমিস্টার ওয়ানে উত্তীর্ণ হয়ে সেমিস্টার টু এর এনরোলমেন্ট করি এবং ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। দুইটা পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি জানতে পারি আমি লেভেল টু সেমিস্টার টু পাশ করতে পারি নি তাই এই সেমিস্টারের পরীক্ষা কন্টিনিউ করতে পারবো না। আমি যদি লেভেল টু সেমিস্টার টু পরীক্ষায় ফেল করে থাকি তাহলে কেন আমাকে লেভেল থ্রি সেমিস্টার ওয়ান পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হলো আর এই সেমিস্টারেই বা কেন এনরোলমেন্ট করতে দেওয়া হলো?

এ বিষয়ে সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের বর্তমান ডিন ও ইকোনমিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রোজিনা ইয়াসমিন লাকি জানান, এই বিভাগের ২০১৯ ব্যাচের লেভেল থ্রি সেমিস্টার ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমি ডিন ছিলাম না তাই সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আর এনরোলমেন্ট, পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ সবকিছু ডিন অফিস নিয়ন্ত্রণ করে তাই বিভাগের চেয়াম্যান হিসেবেও সেটা আমার জানার কথা ছিল না সেসময়। আমি ডিন হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের লেভেল থ্রি সেমিস্টার টু পরীক্ষার এনরোলমেন্ট চেক করে দেখি ওই মেয়ে লেভেল টু সেমিস্টার টু পরীক্ষায় ৩ টি কোর্সে পুনঃপরীক্ষার জন্য এনরোলমেন্ট করে। তখন আমার নজরে আসে যে সে তো লেভেল টু সেমিস্টার টু ই পাশ করতে পারে নি সে কিভাবে লেভেল থ্রি সেমিস্টার টু পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। নিয়ম অনুযায়ী তাকে আর পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয় নি। এখন তাকে স্নাতক করতে চাইলে আবার লেভেল টু সেমিস্টার টু থেকে শুরু করতে হবে।

এ বিষয়ে সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, সে আমাদের কাছে তথ্য গোপন করেছিল। সাধারণত শিক্ষার্থীরা ফেল করলে পরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না। যারা পাশ করে তারাই পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাই আমাদের সেভাবে আর পাশ ফেল চেক করার দরকার ছিল না। ওই ভাবে চেক করাও হয় নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সাধারণত সংশ্লিষ্ট ডিন অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা দেখভাল করে কে পরীক্ষা দিতে পারবে কি পারবে না। সব কিছু চেক করেই কিন্তু ডিন অফিস একজন শিক্ষার্থীকে ক্লিয়ারেন্স প্রদান করে তারপরেই ওই শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারে। এটার সম্পূর্ণ দায়ভার ডিন অফিসের।

পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের ব্যাপারে রেজিস্ট্রার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ফাইনাল পরীক্ষার দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই রেজাল্ট প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। আমাদের সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সময়মতো রেজাল্ট পাবলিশ করতে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১৫:১ হতে হবে। অর্থাৎ ১৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকলে আর কেউ একাধিক কোর্স না নিলে দ্রুত রেজাল্ট পাবলিশ করা সম্ভব হবে। অনুপাত অনুযায়ী শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় দ্রুত রেজাল্ট পাবলিশ সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, আমরা শুধু পাবলিশ করি যেমন রেজাল্ট পাবলিশ রুটিন পাবলিশ এসব। কিন্তু পরীক্ষার জন্য ক্লিয়ারেন্স সংশ্লিষ্ট ডিন অফিস দেয়। শিক্ষার্থীর পাশ ফেল চেক করার ক্ষমতাও ডিন অফিসের। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার সকলকে দ্রুত সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। ফুল অফিস টাইম ও কোনো কাজ পেন্ডিং না রাখার নির্দেশনাও দেওয়া আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ বছর অর্থাৎ ১৪ সেমিস্টারের মধ্য স্নাতক সম্পূর্ণ করতে হবে শিক্ষার্থীদের নতুবা ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালে ভর্তি হওয়া রূপা (ছদ্মনাম) আবার দ্বিতীয় লেভেলের দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে শুরু করলে ১৪ সেমিস্টারের মধ্যে তার স্নাতক শেষ করার অনিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়াও ডিন অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাকরিরত অবস্থায় স্নাতক করার অভিযোগে ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্বের অভিযোগ জানিয়ে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, রেজাল্ট প্রকাশে দেরি হওয়ার কারণে আমরা এনরোলমেন্ট করার সময় অনিশ্চয়তায় ভুগী এছাড়াও সেমিস্টার ফাইনালের ঠিক আগে রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ায় আমরা রেজাল্ট অনুযায়ী পরের সেমিস্টার পরীক্ষার প্রস্তুতিও ঠিক ভাবে নিতে পারি না উল্টো রেজাল্ট প্রকাশের প্রভাবে চলতি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও খারাপ হয়। প্রত্যেক সেমিস্টারে মিড কুইজ ও আগের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট আগেই প্রকাশ করলে আমাদের পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
 

 

কাওসার/শহিদ

×