ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা

ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নতুন উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা

মনিরুল ইসলাম, নোমান বিন হারুন, সুমাইয়া শশী ও আহসান লাবিব

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। এরপর প্রায় একমাস ধরে শূন্য ছিল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী পদটি। দীর্ঘ একমাসের অচলাবস্থার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান সাময়িকভাবে উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম উপাচার্য।

একটি রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গনে কাজ করা শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশাগুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় সংবাদদাতা ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি

বজায় থাকুক মুক্ত সংস্কৃতি 
উপাচার্য শব্দটার মধ্যেই ফুটে উঠে অভিভাবকত্বের ধরণ। বিশ^বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমের প্রধান আসনে বসে নানাবিধ সংস্কারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশেও দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে সংস্কৃতির অবহেলা, অপব্যবহার ও সংস্কৃতির গলা টিপে ধরার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। পড়ালেখার পাশাপাশি মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র কর্তৃক নিবন্ধিত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে দেয়া বরাদ্দ নিতান্তই অপর্যাপ্ত। বাজেট ঘাটতির কারণে সংগঠনগুলোর যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা বরাবরই ব্যাহত হয়। সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। এছাড়া টিএসসি, মুক্তমঞ্চ, অডিটোরিয়াম সংস্কারের যে বরাদ্দ ও পরিকল্পনা করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সংস্কৃতির রাজধানী যেন তার পূর্ণাঙ্গ রূপ ফিরে পায়, সেই প্রত্যাশাই রাখছি নতুন উপাচার্যের কাছে।

মনিরুল ইসলাম
সাবেক সভাপতি, ধ্বনি

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ চাই
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। নতুন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে বিশ^বিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ক্যাম্পাসে তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য নিবর্তনমূলক ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধির ৫ (ঞ) ধারা বাতিল করতে হবে। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

নোমান বিন হারুন 
সাধারণ সম্পাদক, 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় প্রেস ক্লাব

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার অনুরোধ
উপাচার্য স্যার যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হন। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার পাশাপাশি অরাজনৈতিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত হোক- এটা সবার প্রত্যাশা। তিনি যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। রাজনীতি করলেও তার প্রভাব যেন বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে না দেখান। পাশাপাশি দলীয় সংকীর্ণতার বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা রাখি।

রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অফিসগুলোতে শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের হেনস্থার শিকার না হয়, সেই বিষয়ে তিনি যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেন। শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত, বিভাগগুলোর সেশনজট নিরসন, যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া ও ফলাফল প্রদান, বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবাধে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দৃষ্টিপাত করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

সুমাইয়া শশী 
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চাই
নির্বাহী আদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। বর্তমান উপাচার্যের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ অনেক। আশা করি উনি এগুলো সফলতার সাথে শেষ করবেন। বিশ^বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের অপরাধ-অপকর্ম সকলের কাছেই প্রমাণিত। বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। ব্যক্তিগতভাবে সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিও বিশ^বিদ্যালয়ে বন্ধ চাই। রাজনীতি হোক জাকসু নির্ভর। তাই বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দ্রুত জাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাই। প্রত্যাশা করছি নবনিযুক্ত উপাচার্য উপরোক্ত বিষয়গুলোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, সেশন জট নিরসন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা, অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি হবেন উদার ও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামতকেও প্রাধান্য দিবেন।

আহসান লাবিব 
সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

×