ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

তিন বিষয়ে ডি গ্রেড পেলে পরবর্তী ক্লাসে ওঠা যাবে না

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষা

পরিবর্তন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)

বছরের শেষ সময়ে এসে মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন কারিকুলামের মধ্য থেকেই শিখনকালীন মূল্যায়নের সঙ্গে বার্ষিক পরীক্ষা যুক্ত করা হয়েছে। তবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আগের ধাঁচে ফিরবে। এর ফলে চলতি বছরেই মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হবে।

যার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ নম্বরের প্রশ্নপত্র। বাকি ৩০ নম্বর শিখনকালীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলপ্রকাশে যুক্ত করা হবে। বুধবার প্রকাশিত ‘২০২৪ সালের শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশিকায়’ এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর ফলে ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষা ভবিষ্যতের একটি রূপ রেখা পেলেন। 
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। যে কারণে আমাদের পুরোনো শিক্ষাক্রমেই ফিরে যেতে হচ্ছে। আগামী বছর কিছু সংযোজন ও বিয়োজন হবে। তবে এসব শিক্ষার্থীরা যেহেতু নতুন কারিকুলামে পড়েছে, এ বছর বইয়ের পরিবর্তনেরও সুযোগ নেই তাই তাদের একটি মডেল প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর দিতে হবে।

চেয়ারম্যান জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠ, স্কুলে আসা যাওয়ার বিকল্প নেই। আমরা তাদের এই অ্যাকটিভিগুলো পর্যালোচনা করব। শিখনকালীন মূল্যায়ন এসবের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর সঙ্গে নৈপুণ্য অ্যাপের কার্যকারিতাও থাকছে না বলে তিনি জানান।
জানা যায়, নির্দেশিকা জারি করার পাশাপাশি এনসিটিবি চারটি শ্রেণির পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসও প্রকাশ করেছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা এ সিলেবাস ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। নির্দেশিকায় এনসিটিবি জানায়, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা দুটি ভাগে অনুষ্ঠিত হবে।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের দ্বারা শিখনকালীন মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রদত্ত প্রশ্নপত্রের নমুনা অনুসরণ করে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবেন। তবে কোনোক্রমেই নমুনা প্রশ্নপত্র হুবহু ব্যবহার করা যাবে না। প্রণীত প্রশ্নের সাহায্যে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন।
যেভাবে বার্ষিক মূল্যায়ন ॥ প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রমের মোট নম্বর হবে ১০০। এর মধ্যে শিখনকালীন মূল্যায়নের গুরুত্ব হবে ৩০ শতাংশ ও পরীক্ষার গুরুত্ব হবে ৭০ শতাংশ। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জিপি বা গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে নির্দেশিত একক কাজ, জোড়ায় কাজ, পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম শিখনকালীন মূল্যায়নের ‘মূল্যায়ন আইটেম’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিখনকালীন মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আওতাধীন শিখনকালীন মূল্যায়নের যেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং যেগুলো সামনে সম্পন্ন হবে, সেগুলোর রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের যাবতীয় কার্যক্রম বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগে সম্পন্ন করতে হবে।
বার্ষিক পরীক্ষা হবে যেভাবে ॥ বার্ষিক পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষার মোট সময় হবে তিন ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নির্দেশিকা, প্রশ্নের কাঠামো, মানবণ্টন ‘বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনায়’ বিস্তারিত দেওয়া আছে। বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনায় প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র দেওয়া আছে। লিখিত পরীক্ষার উত্তর লেখার জন্য পূর্বের ন্যায় বিদ্যালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় খাতা সরবরাহ করতে হবে।
গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ ॥ শ্রেণি উত্তরণের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ের মোট নম্বর হবে ১০০। এ ১০০ নম্বরের মধ্যে ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নের গুরুত্ব হবে ৩০ শতাংশ এবং লিখিত বার্ষিক পরীক্ষার গুরুত্ব হবে ৭০ শতাংশ। যেহেতু প্রত্যেক বিষয়ে ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ নম্বর ৩০ এবং লিখিত পরীক্ষায় বরাদ্দ নম্বর ১০০, সেহেতু একজন শিক্ষার্থীর একটি বিষয়ের বার্ষিক ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ওই বিষয়ের ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নে তার প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে লিখিত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ৭০ শতাংশ যোগ করে ওই বিষয়ের বার্ষিক ফলাফল বা গ্রেড নির্ণয় করতে হবে।
কোনো বিষয়ে মূল্যায়নে মোট ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে ৫ পয়েন্ট, ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে ৪ পয়েন্ট, ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর পেলে ৩ দশমিক ৫ পয়েন্ট, ৫০ থেকে ৫৯ পেলে ৩ পয়েন্ট, ৪০ থেকে ৪৯ পেলে ২ পয়েন্ট,  ৩৩ থেকে ৩৯ পেলে ১ পয়েন্ট ও ০০ থেকে ৩২ পেলে ০ পয়েন্ট পাবেন শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ আবারও এ+, এ, এ-, বি, সি ও ডি অনুযায়ী ফল প্রকাশিত হবে।
যেভাবে পরের শ্রেণিতে প্রমোশন ॥ একটি বিষয়ে সর্বনি¤œ ডি গ্রেড পেলে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে। তিন বা ততধিক বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী ডি গ্রেড পেলে সে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না। তবে বিষয় শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধান বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের সুযোগ দিতে পারেন।

বিশেষ বিবেচনার বিষয়টি শুধু ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, আগামী বছর থেকে আমরা আগের ধাঁচের শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে যাব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন ও বিয়োজন হবে।

×