ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া পরিদর্শন

গণমাধ্যমের ওপর হামলা রুখে দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৯ আগস্ট ২০২৪

গণমাধ্যমের ওপর হামলা রুখে দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ পরিদর্শনে শিক্ষার্থীরা।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা গণমাধ্যমের ওপর যেকোনো হামলা রুখে দেবেন বলেও এসময় জানানো হয়। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকালে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে হামলার ঘটনার পর নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপর যে হামলা হচ্ছে তার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নন। এই হামলাগুলো কিছু দুষ্কৃতকারী নিজেদের স্বার্থরক্ষায় করে আসছে। গণমাধ্যমের ওপর হামলা রুখে দিতে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত। বিপ্লবের পরেই একটা প্রতিবিপ্লব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখন যেহেতু শিক্ষার্থীরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছেন, সেহেতু কিছু লোক তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব কাজ করে যাচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীদের নামটা বারবার ব্যবহার করে যাচ্ছে। এটা আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। আজকেও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে দেখতে পেলাম। তারা শিক্ষার্থীদের নাম করে যে ভাঙচুর করেছে সেটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ ধরনের কাজকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনোই প্রমোট করেন না।

তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু পরে প্রমাণ হয়েছে যে একটি ধ্বংসযজ্ঞও শিক্ষার্থীদের দ্বারা হয়নি। সুতরাং এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই যুক্ত নন। আমরা গণমাধ্যমের নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে কাজ করছি। আমাদের একটি টিম রয়েছে। আমরা এই টিমকে আরো বড় করব। গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করব। এখানে বিভিন্ন জায়গায় হামলা করা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরো তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এটা কোনো শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে বলে আমরা মনে করি না। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একটি কুচক্রীমহল তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য এ ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে আশা করব তারা যেন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহ্বান রাখব, তারা যেন ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করে।

পরিদর্শনে এসে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমন্বয়ক তরী বলেন, যারা এখানে হামলা করেছে তারা কেউ শিক্ষার্থী নয়। আমরা সবাই আন্দোলন করেছি। আমরা কখনোই চাই না আমাদের দেশের ক্ষতি হোক, আমাদের মানুষের ক্ষতি হোক। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম। সেই গণমাধ্যমের ওপর হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা অন্য গণমাধ্যমকর্মীদের বলতে চাই, যদি কেউ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে হামলা করে আপনারা তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের পাশে আছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীদের সহযোগিতায় এই দুর্বৃত্তদের রুখে দেব।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সমন্বয়ক হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, যারা এখনো হামলা ও তাণ্ডবের চেষ্টা করছে তারা দুর্বৃত্ত। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সৃষ্ট যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে এই হামলাকারীরা স্বৈরাচারের দোসর। আমরা এই বিষয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। আমাদের স্পষ্ট বার্তা যে আমাদের নতুন বাংলাদেশে এখন আর কোনো দুষ্কৃতকারীর স্থান হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছেন, সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে কোথাও যদি দুষ্কৃতকারী দেখেন তবে তাদের বেঁধে ফেলে আইনের হাতে তুলে দিন। এদের হামলার উদ্দেশ্য চারদিকে আতঙ্ক ছড়ানো, আমাদের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো। এরা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। এরা রাজাকারের দোসর। আমরা এখন থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি, তারা যেন আর এ ধরনের নৈরাজ্য চালাতে না পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়ে এ ধরনের হামলা সংঘটিত করেছে। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রসমাজের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং ছাত্রসমাজের অর্জনকে বেহাত বিপ্লব করার জন্য দুষ্কৃতকারীরা কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এসব দুষ্কৃতকারীকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, আমরা আমাদের রাজপথের সংগ্রাম শেষ করিনি। রাষ্ট্রকে সংস্কার করার আগ পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। এই সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যদি কেউ চেষ্টা করে তাহলে আমরা তার কালো হাত ভেঙে দেব। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৫ আগস্ট থেকে কাজ করে আসছে। গণমাধ্যম গণমানুষের কথা বলবে, এই সংস্কৃতি আমরা চালু করব। সেই জায়গা থেকে আমরা সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানাব, আপনারা গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সব সময় সোচ্চার ছিল, সামনেও থাকবে।

 

এম হাসান

×