
কিশোর শাহরিয়ার কবির আনাস
‘একদিন তো মরতেই হবে। তাই মৃত্যু ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যুও অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হইয়ো।’
গত ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত লং মার্চের দিনে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিতে এসব কথা লিখে বাড়ি থেকে বের হয় কিশোর শাহরিয়ার কবির আনাস। আনাস গেন্ডারিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিন লং মার্চে চানখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।শনিবার আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ জনকণ্ঠের সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। আনাসের বাবা বলেন ছেলে ছিলো সৎ আর নির্ভিক। ঐদিন বাড়ি থেকে বের হবার আগের লেখা চিঠিতে আনাস আরো লেখেন, মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। স্যরি আব্বুজান, তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে।
বাবা-মায়ের উদ্দেশে আনাস আরো লেখেন, প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে তাহলে আমি কেনো বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতেই হবে। তাই মৃত্যু ভয় করে স্বার্থপরেএ মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যুও অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেই সেই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেচে না ফিরি তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হইয়ো। জীবনে প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।
এদিন আনাস গুলিবিদ্ধ হবার পরে মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ। প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একই জায়গায় আন্দোলন করছিলাম। পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করছিলো। আনাসের বুক-পেট বরাবর গুলি লাগে। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
কান্নাবিজড়িত কন্ঠে আনাসের পিতা বলেন, লং মার্চে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আনাস। ওই দিন সাড়ে ১১টার দিকে গুলি লাগে তার। মিডফোর্ড মেডিকেলে নেওয়ার পরে চিকিৎসক তার মৃত ঘোষণা করে। ছেলের স্বপ্নের কথা জানিয়ে পিতা পলাশ বলেন, আমার ছেলে খুবই ভদ্র ছিলো। ওর স্বপ্ন ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হবে। ছেলেটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হলো না। পুলিশের গুলি ও জীবন নিয়ে নিলো। আনাসের বাবা বলেন, আমার ছেলেটা শহিদী মর্যাদা পাক। রাষ্টীয় মর্যাদা পাক।
এবি