ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ চাকরি

কোটার প্রজ্ঞাপন জারি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৩ জুলাই ২০২৪

কোটার প্রজ্ঞাপন জারি

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নতুন কোটা বিন্যাসের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এক শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী ও জেলা কোটা থাকছে না। 

মঙ্গলবার গুলশানে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গত ২১ জুলাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে কোটাও নির্ধারণ করেন আদালত।

আদেশ প্রদান সত্ত্বে¡ও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলে জানান আদালত। রবিবারই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর পর রায়ের আলোকে প্রস্তুত করা হয় সার সংক্ষেপ। ওই সার সংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রাতে এতে স্বাক্ষর করেন। এর পর মঙ্গলবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।  প্রজ্ঞাপন জারির পর চার মন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। 
সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কোটা বাতিল করার যে পরিপত্রটা ২০১৮ সালে দেওয়া হয়েছিল সেটাও বাতিল করা হলো। এই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গেজেট নোটিফিকেশন প্রায় হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে সরকারের থেকে যা যা করণীয় হয়েছে তা আমি তার সারমর্ম আপনাদের তুলে ধরছি। (১) আমরা কোটা সংস্কারের যে রায় সর্বোচ্চ আপিল বিভাগ  দিয়েছে তা প্রতিপালন করেছি। (২) আমরা এর আগে যে সহিংসতা হয়েছে তার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিট গঠন করেছি।

এক সদস্য বিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ঘটনা স্থল পরিদর্শনে যাবেন। (৩) সহিংসতায় হয়েছে তাতে সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা আহত হয়েছেন  তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার দেখভাল করবে। (৪) মামলার তথ্যাদি যদি উনারা আমাদের দেন, সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা এই কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিলেন তাদের ব্যাপারে কোনো মামলা হয়ে থাকে। সেগুলো আমরা অবশ্যই দেখব। আর শেষ কথা যেটা বলতে চাই আমরা শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সকল ছাত্রছাত্রীকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার তৈরি করবে। 
নারী কোটা বাতিল করা হয়েছে, নারী কোটা আবার আসবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ে একটা কমা, দাঁড়ি, সেমিকলন বদলানোর কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। যেহেতু বদলানোর ক্ষমতা নেই তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেই ভাবেই এটা প্রতিপালন করেছি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, মূলত এটা ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন, কোটা সংস্কার চেয়ে। আমি আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানাব ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল সংস্কার চেয়ে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কক্তব্য আছে যেটা জনগণ মনে করে করা উচিত।

তাদের এখন স্ব-স্ব জায়গায় ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা উচিত এটাই আমার তাদের কাছে আহ্বান। রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ নিয়োগের কোটা আছে সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে সকল গ্রেডে। তার সঙ্গে যোগ করব সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু চারটি ক্যাটাগরি করে দিয়েছে পরিষ্কারভাবে। এর বাইরে সরকার যেতে পারবে না। কারণ এটা আপিল বিভাগের রায়। এর বাইরে যাওয়ার আমাদের কোনো অভিপ্রায়ও নেই। 
ভবিষ্যতে এ রায় পরিবর্তন করা যেতে পারে সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কার বলা আছে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমি এর আগেও বলেছিলাম সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটা রায় দিয়েছেন সুদূরপ্রসারী। তার কারণ হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত যদি এখানে শেষ করে দিতেন, তা হলে ভবিষ্যতে বদলাতে রিভিউ করতে হতো। কারণ হচ্ছে এটা সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউ এর সময়ও ততদিন চলে যেত। সেই জন্য সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন ভবিষ্যতে বিষয়। ভবিস্যতের জন্য প্রয়োজন হলে তখন দেখা যাবে। আর কোনো দিন কখন আইন ছিল না। এটা সব সময়ই সরকারের পলিসি ম্যাটার। প্রজ্ঞাপন দ্বারাই বলা হতো। 
দাবি মানার পরও শিক্ষার্থীরা আবারও আল্টিমেটাম দিয়েছে সে প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো আল্টিমেটাম পাই নাই। আগে তাদের নিরাপত্তা দরকার। শিক্ষার্থীদের পেছনে কারা ছিল তা তদন্ত করে নিরূপণ করা হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কোনো শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তা এখনো আমাদের কাছে নেই। এটা নিরূপণ  করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে তথ্যের বিভ্রাট রয়েছে।
তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের প্রস্তুতি ছিল দেশকে জ্বালিয়ে দেওয়া। কিছু বিদেশী মিডিয়া ভুল তথ্য দিচ্ছে। আক্রমণের কোনো খবর নেই। আন্দোলনে পেছনে ছিল কারা। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল আক্রান্ত। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তরা দায়ী। তাদের বিচার করে সাজার আওতায় আনা হবে। সরকারের সঙ্গে ছাত্রদের যে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়ে গেছে সেটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে নেই। আপনাদের কাছেও অনুরোধ থাকবে এই অপতথ্যের বিপক্ষে খবর পাঠান। আমরা চেষ্টা করছি ইন্টারনেট চালু করা। স্বল্প মাত্রায় যেন  আনা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারও গোট পৃথিবীকে জানিয়ে দেন আসলে কি হয়েছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাহী ছুটির বিষয়ে এখনো নির্দেশনা পাই নাই। পাইলেই জানিয়ে দেওয়া হবে। 
আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় সেটার ব্যাপারে সচেষ্ট। সে জন্যই আশা করতে পারেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে শুধু কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না।

এটা বিএনপিÑজামায়াত, ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরাই আন্দোলনের সম্পৃক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যে আইন লঙ্ঘন করেছে সেই আইনেই বিচার হবে। তদন্ত রিপোর্ট আসুক তার পর দেখা যাবে কোন আইনে বিচার হবে। আমরা অবশ্যই ধৈর্য ধরেছি। ধৈর্য ধরার কারণও আছে। তারা কমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল। আমরা চেয়েছি এখনো চাচ্ছি এই কমলমতি শিক্ষার্র্থীরা বাড়িতে ফিরে যাক। সরকার এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় যথেষ্ট শক্তি আছে। 

প্রজ্ঞাপন জারি ॥ মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার এই  মর্মে আদেশ জারি করছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/ আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্নরূপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হলো : (ক) মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ (খ) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (গ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং  (ঘ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ১ শতাংশ। ২) নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা হতে পূরণ করা হবে। ৩) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা এর বিগত ৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পরিপত্র নং ০৫.০০.০০০০. ১৭০.১১.০৭.১৮-২৭৬সহ পূর্বে জারিকৃত এ সংক্রান্ত সকল পরিপত্র /প্রজ্ঞাপন / আদেশ /নির্দেশ /অনুশাসন রহিত করা হলো। ৪) এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

×