ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

নিউইয়র্কে ঢাবির ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভীষণ আবেগের জায়গা’

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৭ জুলাই ২০২৪

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভীষণ আবেগের জায়গা’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। কুইন্সের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়টে আনন্দঘন পরিবেশে এই উদযাপন সম্পন্ন হয় গত ১ জুলাই।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর সবাই মিলে গেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যানথেম। পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও ইমাম মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আয়োজনকে রাঙিয়ে তোলেন গোলাম মোস্তফা।

অনুষ্ঠানের সিংহভাগ জুড়ে ছিল স্মৃতিচারণ। ক্যাম্পাস জীবনের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন ফরিদা চৌধুরী, মনজুর চৌধুরী, সিলভিয়া সাবেরিন, মোসা. ওয়াহিদা শামসুন, মো. আবদুল কাইয়ুম, সজল রোশান, লুবানা রশিদ এবং মো. গোলাম মোস্তফা।

ফরিদা চৌধুরী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে আমি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি ১৯৮১ সালে। ওই সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল অসাধারণ সম্পর্ক। আমরা একটা পারিবারিক আবহে কাটিয়েছি ক্যাম্পাস জীবন। এটি আমাদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। 

সিলভিয়া সাবেরিন জানান, যখন থেকে এই অনুষ্ঠানের খবর পেয়েছি, তখন থেকেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মনের আঙিনায় এখনও ভাসছে সেই টিএসসি, কলাভবন, নীলক্ষেত, মল চত্বর, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রতিটি স্মৃতি।

মনজুর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি খুবই দুষ্টু ছিলাম। এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট ছিল না, যেখানে আমার কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আমাকে খুব আদর করতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জীবনটা আমি খুবই মিস করি। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রাণের এই প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাবে।

আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করিনি। অ্যাকাউন্টিংয়ের ইভিনিং কোর্সে এমবিএ করেছি। তাই আপনাদের মতো আমার হলের কোনো স্মৃতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি আমার আবেগ রয়েছে। রেগুলার স্টুডেন্ট না হলেও দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। 

লুবানা রশিদ বলেন, আমি পড়েছি ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে, এটাচড ছিলাম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। দারুণ সময় কেটেছে পুরো ক্যাম্পাস জীবন। আমি প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষকরাও আমাদেরকে দারুণভাবে আগলে রেখেছেন। 

সুখন গোমেজ বলেন, আমি আজ আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভীষণ আবেগের এক জায়গা। আমি আরেকটু বেশি আবেগে আপ্লুত হই এ কারণে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আন্দোলন শামসুনন্নাহার হল থেকে তৈরি হওয়া শিক্ষার্থী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলাম।

জাতিসংঘের কর্মকর্তা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য মেধাবী এবং সফল মানুষের জন্ম দিয়েছে। তবে ইদানীং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সেই প্রশ্ন যে সম্পূর্ণ অমূলক, তাও নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। 

রওশন আরা বেগম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বসবাস করছি, আমাদের মাঝে কীভাবে আরও সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। শুধু বছরান্তে নয়, আমরা এভাবে মিলিত হতে চাই কিছুদিন পরপর।

ড. মোহাম্মদ মুজিবুল হক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমর্থ হবো। 

গোলাম মোস্তফা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ভালোবাসি। আর সেজন্যই আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক। কিন্তু পড়াশোনার বিশ্বমান কতটুকু ধরে রাখতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি, সেটা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

রুবি আরেফিন জানান, শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমরা আশাকরি, এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও হাজার বছর সগৌরবে টিকে থাকবে। আমরা যেমন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরে গর্ব অনুভব করি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোয় আলোকিত হবে।

নাজিয়া আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের বাতিঘর। এই দেশটির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান।

গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে নিউইয়র্কে এই আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতিটি আয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এ বছর সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সজল রোশানকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। 

প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন উদযাপনের অন্যতম অংশ ছিল কেক কাটা। এরপর নির্মল আড্ডা আর গল্প-গুজবে মেতে ওঠেন সবাই। ফটোসেশন পর্বে চলে দলবেঁধে ছবি তোলা।

 এসআর

×