ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

জাবির বাজেট পাশ, গুরুত্ব পায়নি শিক্ষার্থীদের খাতগুলো

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৩০ জুন ২০২৪

জাবির বাজেট পাশ, গুরুত্ব পায়নি শিক্ষার্থীদের খাতগুলো

বার্ষিক সিনেট অধিবেশন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য তিনশো ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। শনিবার (২৯ জুন) বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বাজেট অনুমোদিত হয়।

এ বছর বাজেটের আকার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অপরদিকে প্রতিবারের মত এবারের বাজেটেও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলো গুরুত্ব পায়নি। 

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি ও পিএইচডি প্রোগ্রাম বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ২০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। 

যা শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্র ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তবে খেলাধুলা ও পাঠ বহির্ভূত কার্যক্রম বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৩ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ মাত্র।

এবার গত বছরের তুলনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের মাত্র ২.৪৫ শতাংশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাবন্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে এ বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন বাজেট বিশ্লেষকরা।

এদিকে চিকিৎসা কেন্দ্র খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৯৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। যা মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্য থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, ঔষধপত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বহন করা হবে। এখাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে এ বরাদ্দ নামে মাত্র। এই অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। বারবার এ খাতে গুরুত্বারোপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলেও প্রশাসন দৃষ্টি দিচ্ছে না। ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীরা চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ সামগ্রী পায় না।’

অন্যদিকে ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এ বাজেট বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা অনুদান দেবে। আর বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব সূত্রে আয় হবে ৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধিত বাজেটের আকার ৩১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২২-২৩ সনের ক্রমপুঞ্জিত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের ৬৪.৫৫ শতাংশ। এছাড়া পণ্য ও সেবা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, পেনশন ও অবসর সুবিধা বাবদ ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, অন্যান্য ব্যয় ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যন্ত্রপাতি খাতের ব্যয় ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যানবাহন ক্রয় বাবদ শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যয় বাবদ শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ।

বাজেট অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘বর্তমানে রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৬৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবছরে আনুমানিক ১২ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সুষম বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব। ঘাটতির পরিমাণ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।’
 

এসআর

×