ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

দুই ধাপে ১০ বিশ্ববিদ্যালয় পাবে পিইচডির অনুমোদন

আসিফ হাসান কাজল 

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২৫ জুন ২০২৪

দুই ধাপে ১০ বিশ্ববিদ্যালয় পাবে পিইচডির অনুমোদন

পিইচডি প্রোগ্রাম।

দীর্ঘদিন দাবির পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে পিইচডি প্রোগ্রাম। তবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই সুযোগ পাচ্ছে না। দুই ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫টি ও পরবর্তীতে ৫টি মিলিয়ে মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রোগ্রাম খোলার সুযোগ পাবে। পিইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক, পিইচডি শিক্ষক ও স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হবে। এরপর সেটি বাড়িয়ে ১০টা পর্যন্ত করা হতে পারে। কোনোভাবেই গণহারে পিএইচডি প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু করা হবে না। পিএইচডি প্রোগ্রাম কিভাবে চলছে সে বিষয়েও থাকবে কঠিন নজরদারি। 

কোন বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ পাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টের সিলেবাস, শিক্ষক সংখ্যা, তাদের যোগ্যতা, ল্যাব ও সক্ষমতা বিবেচনা করা হবে। অতীতে যাদের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল তাদের জন্য এখানে কোন সুযোগই থাকবে না।’

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান বাড়াতে পিএইচডির প্রোগ্রাম পরিচালনার সুযোগ চেয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এর আগেও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী এই প্রোগ্রাম খোলার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। সর্বশেষ বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর হাত ধরেই এই প্রোগ্রাম চালু হতে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ উপলক্ষে ছয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ইউজিসি সূত্র বলছে, বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর কর্মযজ্ঞে এরই মধ্যে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রাম পরিচালনার সার্বিক রূপরেখা নির্ধারণ করবে। এরপর একটি মডিউল তৈরি করা হবে। এরপর ইউজিসির ফুল কমিশনে আলোচনার মাধ্যমে পাস হয়ে আসবে। 

ছয় সদস্যবিশিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলামকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান, উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক গৌর গোবিন্দ গোস্বামী, গ্রিন ইউনিভার্সিটির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ এবং ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুখ।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করবে; কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে এবং কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন একাডেমিক ডিসিপ্লিন ও ক্লাস্টারের উপযোগী পিএইচডি কোর্সওয়ার্ক/রিসার্চ মেথডোলজি-সংক্রান্ত কারিকুলাম বা মডিউলগুলো প্রণয়ন করতে পারবে।

কমিটির সদস্য ও ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) মো. ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘নীতিমালায় অনেকগুলো শর্ত রাখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যা, তাদের কতজনের পিইচডি রয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইচডি করা, কতগুলো পাবলিকেশন প্রকাশ হয়েছে, কোন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে এ বিষয়গুলো দেখা হবে। এছাড়াও ইউজিসির শর্ত মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে কী না ও স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। এসব শর্ত পূরণ করে যারা আবেদন করবে সেটি বিবেচনা করে এই প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন দেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টিকে উচ্চশিক্ষার অন্যতম মূল লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন পিএইচডি গবেষকরা। যদিও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি গবেষণার কোনো সুযোগ নেই। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পিইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সে গবেষণা দেশ ও সমাজে কি কাজে লাগছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র‌্যাঙ্কিংয়ে এক হাজারের মধ্যে এবার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে দুটি পাবলিক ও একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫৪তম, বুয়েট ৭৬১-৭৭০ এরমধ্যে ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ৯০১-৯৫০ এর মধ্যে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালু একটি চমৎকার উদ্যোগ। যদিও আমাদের দেশে আরো পাঁচ বছর আগে এটি চালু হওয়ার দরকার ছিল। হায়ার এডুকেশনসহ যেসব আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং সংস্থা রয়েছে তারা যখন জানতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির খবর, তখন আমরা নিশ্চুপ থাকি। এর জন্য আমাদের নম্বরও যোগ হয় না। যেকারণে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে পড়ছে। নর্থ সাউথ তারমধ্যে অন্যতম ভুক্তভোগী। 

আমাদের প্রতিবেশী দেশের কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি দেওয়া হয় কী না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, হাভার্ড সবগুলোই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নেওয়া অনেক সম্মানের। আমি আশা করি আগামীতে বিদেশি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ব্যবস্থাপনাও আমাদের দেশে চালু করা হোক। এতে উচ্চ শিক্ষার মান বাড়বে।’

জানতে চাইলে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নীতিমালা হয়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গেলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাবে। এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যেহেতু সমান নয়, সেক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা ও পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সাপেক্ষে এটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হলে ভালো হবে।’

কাজল/এম হাসান

×