ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণের দাবি শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণের দাবি শিক্ষার্থীদের

মানববন্ধন

মেট্রোরেলের ভাড়া কমিয়ে সর্বনিম্ন ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ভাড়া ৫০ টাকা পুনঃনির্ধারণ, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী ন্যূনতম আয় শ্রেণির মানুষের জন্য হাফ ভাড়া, নিয়মিত যাত্রীদের মাসিক কার্ডে বিশেষ কনসেশন প্রদান এবং মেট্রোরেলের পরিচালনা পরিষদে যাত্রী প্রতিনিধিত্ব ও মেট্রো স্টেশনে টয়লেট ব্যবহারের উচ্চ ফি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নাগরিক অধিকার আন্দোলন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মিরপুর ১০ নং মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন ফায়ার সার্ভিসের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

মানববন্ধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’ মিরপুরের সংগঠক গল্পকার মাহমুদুল হক আরিফ ও পরিচালনা করেন শিক্ষক শামীম জামান। এতে বক্তব্য রাখেন—সমাজকর্মী ড. সৈয়দ তারিকুজ্জামান, সংস্কৃতিকর্মী শামীমা দিশা, ডা. মুজিবুল হক আরজু, শ্রমিকনেত্রী শবনম হাফিজ, সিপিবি নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নেতা শামীম ইমাম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা রাশেদ শাহরিয়ার, দুয়ারিপাড়ার কাঠমিস্ত্রি শহীদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম কিরণ প্রমুখ। 

মানববন্ধন সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘যানজটের শহর ঢাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত মেট্রোরেলের দ্রুতগতির, নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহনসেবা পাওয়ার অধিকার ঢাকার সর্বস্তরের জনগণের। কারণ মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারের ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি যে ব্যয় হয়েছে, তা দেশের সব মানুষের দেওয়া ট্যাক্সের টাকা থেকেই আসবে। অথচ মেট্রোরেলে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শ্রমজীবী, গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষ এমনকি মধ্যবিত্তের অনেকের সাধ্যের বেশি। এই বাড়তি ভাড়া নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করবে।’ 

‘উত্তরা-মতিঝিল ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ২০ টাকা ও ১০০ টাকা। এই ভাড়া রাজধানীর বেসরকারি বাস ভাড়ার দ্বিগুণ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ বেশি। প্রশ্ন ওঠে, মেট্রোরেল কি তবে শুধু আর্থিকভাবে সচ্ছলদের জন্য? এই ট্রেন কি জনকল্যাণে করা হয়েছে, না কি মুনাফা করার উদ্দেশ্য? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেলসহ গণপরিবহন সরকার ভর্তুকি দিয়ে চালায়। 

অথচ আমাদের দেশে পরিচালন ব্যয় তোলার বাইরেও মেট্রোরেল নির্মাণে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ করার জন্য এবং বেসরকারি বাসমালিকদের স্বার্থে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেলের কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণব্যয়ও সাম্প্রতিককালে নির্মিত জাকার্তা ও লাহোর মেট্রোরেলে ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।’ 

তাঁরা আরও বলেন, মেট্রোরেল আইন ২০১৫-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে—‘জনসাধারণকে স্বল্পব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহন সেবা প্রদান’। এই আইনের ১৮ (২) ধারায় মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল পরিচালনার ব্যয় এবং জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়গুলো বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। মেট্রোরেল বিধিমালা ২০১৬—এর ২২ (ঘ) ধারায় ‘অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সহিত সামঞ্জস্য রক্ষা’র কথাও বলা হয়েছে। সুতরাং ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার নিজের তৈরি আইন ও বিধিমালাই অনুসরণ করেনি। এছাড়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণে গঠিত কমিটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ভাড়া প্রস্তাব করে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা হারে সর্বনিম্ন ৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা।’ 

কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো মুনাফা না ধরে শুধু পরিচালন ব্যয় হিসাব করে এই ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে ঋণ পরিশোধসহ পরিচালন ব্যয় মেটাতে দিনে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋণ ও সরকারের ব্যয় পরিশোধে। মেট্রোরেল পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ দিনে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৭১৭ টাকা, রক্ষণাবেক্ষণে দিনে ৭ লাখ টাকা, অন্যান্য প্রশাসনিক খাতে ব্যয় ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৮৫ টাকা, বিদ্যুৎ বাবদ ৬৭ হাজার ৯৮৫ টাকা প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা আদায়ের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার কমিটির প্রস্তাব না মেনে মেট্রোরেলের ভাড়া চূড়ান্ত করেছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা হারে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। 

বক্তারা আরও বলেন, বেশি ভাড়ার কারণে শ্রমজীবী মানুষ তো দূরের কথা, এমনকি নিম্ন আয়ের অফিসযাত্রীদের পক্ষেও নিয়মিত মেট্রো ব্যবহার কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই মেট্রোরেল যেন শুধু সামর্থ্যবান শ্রেণির মানুষের বাহনে পরিণত না হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার রাখতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এবং প্রতিবেশী দেশের নগরীগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেলের ভাড়া হ্রাস করা প্রয়োজন। 

৪ দফা দাবিতে ‘নাগরিক আন্দোলন’ আগামীতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান, মতবিনিময়, যাত্রীসাধারণকে সংগঠিত করাসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে।

 

এস

সম্পর্কিত বিষয়:

×