ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত 

সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২১ জানুয়ারি ২০২৪

শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত 

শিক্ষা ভবন

শিক্ষক ও জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার (ম্যাটস) মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারজন খণ্ডকালীন মেডিকেল অফিসারকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও যোগদান করেছে মাত্র একজন শিক্ষক বাকি তিনজনই যোগদান করেননি।

শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবে নেই কোন শিক্ষা সরঞ্জাম। এমন পরিস্থিতিতে  অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠানটিতে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর ওসমান গণি অধ্যক্ষ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির কোনো পদেই এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষককে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে অতিথি শিক্ষক দিয়ে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোন শিক্ষা সরঞ্জামাদি।

জানা যায়,উপজেলার ধুল্যা এলাকায় অবস্থিত মেডিকেল এ্যাসিস্টেন টেনিং স্কুল (ম্যাটস)২০১৮ সাালের ১ সেপ্টেম্বর এর ভিক্তি প্রস্তুর উদ্ভোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ম্যাটসের ৪ বছর মেয়াদি শিক্ষা কার্যক্রমের ২০২২-২০২৩ শিক্ষা বর্ষে ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে প্রথম ব্যাচে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 

ম্যাটস ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়,একজন শিক্ষক ফিজিওলজি ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কাউছার হোসেন।

ডা. কাউছার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন,মেডিকেল এ্যাসিস্টেন টেনিং স্কুল (ম্যাটসে) শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ডা.রাসেল হোসেন, ডা. নুসরাত জাহান মৌরিন ও ডা.সালসাবিল অরর্চিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডা.রাসেল হোসেন নিয়োগ দেওয়ার পর এখানে যোগদান করেননি। ডা:নুসরাত জাহান মৌরিন যোগদান করে দুই বছরের জন্য শিক্ষাকালীন ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন এবং ডা:সালসাবির হোসেন অরর্চি তিনি যোগদান করেই বিদেশ চলে গেছেন।

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু তিনি আর অধ্যক্ষ সপ্তাহে দুই-একদিন ক্লাস নিয়ে থাকেন। 

এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে একজন মাত্র নিরাপত্তা কর্মী। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন,বহিরাগতরা ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। এছাড়াও ছাত্রী হোস্টেলের পিছনের রাস্তায় বখাটেরা মেয়েদের বাজে মন্তব্য করে থাকে।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, একাডেমিক ভবন, মহিলা হোস্টেল, পুরুষ হোস্টেল, স্টাফ কোয়ার্টার, অফিসার্স কোয়ার্টার, গ্যারেজ ও সাব ষ্টেশনটি একজন অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী  জামাল হোসেন দেখাশুনা করেন।

এ ব্যাপারে নিরাপত্তা কর্মী জামাল হোসেন বলেন এত বড় প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা প্রদান করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়।তিনি বলেন এখানে প্রয়োজন তিন থেকে চার জন নিরাপত্তা কর্মীর।তিনি মূলত এখানকার সাব স্টেশনটির দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পুরো ক্যাম্পাসটির নিরাপত্তা তার একাই প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে তার জন্য সেটা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি ।

নীলফামারী ডিমলা এলাকা থেকে পড়াশুনা আসা বিভা আক্তার ও ময়মনসিংহ থেকে আসা রিতু আক্তার বলেন,ছাত্রী হোস্টেলে নেই কোন নিরাপত্তা।এ ছাড়াও এখানে নেই কোন ক্যান্টিন ব্যাবস্থা ফলে আমাদের নিজেদেরই রান্না করে খেতে হয়।রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়া করতে অনেক সময় কেটে যায়,এতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে এবং পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।এ ছাড়াও এখানকার পানির ব্যবস্থাও ভালো না।

ফলে খাবার পানি কিনে খেতে হয়।তারা আরো বলেন প্রতিদিন ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক না থাকায় সপ্তাহে মাএ একটি থেকে দুটি ক্লাস হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের জন্য ২৬ আসন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ২৫ জনের আসন। এ ছাড়াও আমরা এখানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন,প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্যই শিক্ষক নেই।তারমধ্যে আবার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন।তাদের ক্লাস শুরু হবে মার্চে। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম আছে কিন্তু নেই কোন বসার আসবাপত্র। নেই কোন শিক্ষক। 

সাটুরিয়া মেডিকেল এ্যাসিস্টেন টেনিং স্কুলের অধ্যাক্ষ ডা. ওসমান গনি বলেন,স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হলেও নেই শিক্ষক। ক্লাসরুমসহ প্রশাসনিক ভবনগুলোতে কোন নেই আসবাপত্র।

তিনি আরো বলেন,এখানে এখনো কোন বাজেট ঘোষণা করা হয় নি।ফলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।বিভিন্ন উপজেলা থেকে আবাসিক মেডিকেল ডাক্তারদের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে এনে ক্লাস করানো হচ্ছে।আবার যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারাও যোগদান করেননি।

তিনি আরো বলেন, বাজেট ও জনবল দেওয়া না হলে কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে।এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জনবল ও বাজেট চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এসআর

×