ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: জনকণ্ঠ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের দায়ে এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া র্যাগিংয়ের দায়ে দুই জনকে স্থায়ী ও তিন জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে দেড়টার দিকে এ সিদ্ধান্ত জানান কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন :সমুদ্রের গভীরে পাতা ফাঁদে আটকে গেল চীনের ডুবোজাহাজ, মৃত্যু ৫৫ সেন
এদিকে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেল ৪টায় প্রধান ফটক অবরোধ করেন তাদের বন্ধুরা। এতে বিকেলে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকে পড়েন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সাড়ে পাঁচটার পর তারা গেট ছেড়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনাই সেদিন ঘটেনি। এছাড়া অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ মুঠোফোনে লাউড স্পিকারে শিক্ষার্থীদের বলেন, এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ প্রক্টরের এ বক্তব্যে দুই ঘণ্টা পর আবরোধ ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আন্দোলনের পর সন্ধ্যা ৭টায় তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার মো. সাহেদ হাসানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে দুই ঘটনায় অভিযুক্ত ছয়জনকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষণাকৃত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন ঘোষণার বিষয়ে জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. আমানুর আমান বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মিটিংয়ে কি হয়েছে তা আমি জানি না। উপাচার্য স্যারের মাধ্যমে যা এসেছে আমি তা প্রচার করেছি।
এর আগে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, র্যাগিংয়ের দায়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিশাম নাজির শুভ ও মিজানুর রহমান ইমন স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় একই বিভাগের শাহরিয়ার পুলক, শেখ সালাউদ্দীন সাকিব ও সাদমান সাকিব আকিবকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে মধ্যরাতে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের ঘটনায় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্যকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদানের ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আজ বুধবার একটি আলোচনা সভায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। এর আগে ২০ আগস্ট শোকসভার অনুষ্ঠানে ঢোকাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। ওই শোকসভায় সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফসহ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ.কা.ম সরওয়ার জাহান বাদশা অতিথি ছিলেন।
গত ১০ জুলাই মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আতিক আরমান এবং সালমান আজিজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কাব্যের সংশ্লিষ্টতা পেলেও আরমান আতিক এবং সালমান আজিজের সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে জানা গেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শুভ, ইমন পুলক, সাকিব ও আকিবের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসআর
