ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী বহিষ্কার

ইবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ১৫ জুলাই ২০২৩; আপডেট: ১৬:৫১, ১৫ জুলাই ২০২৩

ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী বহিষ্কার

বহিষ্কার হওয়া পাঁচজন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধির দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮ ধারা অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী। তিনি তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। 

শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কার্যালয়ে ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের দিন থেকই এই আদেশ কার্যকর হবে।

সভায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলীনা নাসরীন, আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসানসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক ছাত্রীকে গণরুমে নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সেই নিযাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর সংশ্লিষ্টতার সত্যতাও পেয়েছ কমিটি। তারই ভিত্তিতে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধির দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮ ধারা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী আইনভঙ্গ বা অসদাচরণ করলে শৃঙ্খলা কমিটির মতামত নিয়ে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য বহিষ্কার করতে পারেন উপাচার্য। সেই অনুযায়ী তাদের আগামী এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের বহিষ্কারাদেশ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে কার্যকর হবে। এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হবে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাৎদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী এক বছরের বহিষ্কারের নিয়ম রয়েছে। কন্ডাক্ট অনুযায়ী এক বছরের বেশি বহিষ্কারের নিয়ম নেই। সে অনুযায়ী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্ত পাঁচ জনের দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর সিদ্ধান্তের সময় থেকেই বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে।

এদিকে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী ছাত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট নই; বরং আরো আতঙ্কিত। তারা এক বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে এসে আমার প্রতিশোধ যে নিবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি সঠিক বিচার পাইনি। আমি চাই তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হোক।

ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ‘আমি আগে থেকে ধরেই নিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি ন্যায়বিচার পাবো না। আমি এখনো আদেশের চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে পরে মন্তব্য করবো।’

এর আগে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভূক্তভোগী। 

এ নিয়ে হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হাইকোর্টে এবং শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া, হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।

এম হাসান

সম্পর্কিত বিষয়:

×