শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষকতা পেশায় প্রাথমিক সুপারিশ পেয়েও প্রায় ৫ মাসে চূড়ান্ত সুপারিশ পায়নি চার হাজার শিক্ষক। যে কারণে তাদের মধ্যে বেড়েছে হতাশা। মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু না হওয়ায় এ জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
তবে প্রায় ৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে এসব শিক্ষকদের ভি-রোল ফর্ম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর এসব শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশ ও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সরোজ কুমার নাথ এসব শিক্ষকের নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির চ’ড়ান্ত সুপারিশের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু হয়েছে। ভি-রোল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ইতোমধ্যে। ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলেই পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চলতি বছরের ০৬ ফেব্রুয়ারি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন না পাওয়ায় শূন্য পদের ভিত্তিতে এটি প্রকাশ করা হয়। বিশেষ এই গণবিজ্ঞপ্তির ফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এরপর ৫ জুন ১১ হাজারের বেশি শিক্ষককে প্রাথমিক সুপারিশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের ৭ জুলাইয়ের মধ্যে ভেরিফিকেশন ফর্ম (ভি-রোল) জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় এনটিআরসিএ। কিন্তু ভি-রোল ফর্ম সবাই জমা দেয়নি। অনেকের সার্টিফিকেটে সমস্যা থাকায় ৪ হাজার ৯২ জনের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এনটিআরসিএ। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই নিয়োগ দেওয়া ও চ’ড়ান্ত সুপারিশের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান প্রদক্ষেপ আশা করছেন প্রায় ৪ হাজারের বেশি চাকরি প্রার্থীরা।
চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে প্রথমবারের মত শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষকের ভেরিফিকেশন করা দীর্ঘ সময়ের বিষয়। যেকারণে সেসময় ভেরিফিকেশন চালু রেখেই নিয়োগ দেওয়া শুরু করে নিয়োগ প্রদানকারী সংস্থা এনটিআরসিএ। সেখানে বলা হয়, নিয়োগ দেওয়ার পর যদি কারও রিপোর্টে বিরুপ কিছু পাওয়া গেলে চাকরি বাতিল করা হবে। আমারাও এমন সুযোগ চাই।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, প্রাথমিকভাবে সুপারিশ পেয়ে অনেকেই আগের চাকরি ছেড়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাসে নিয়োগ না হওয়ায় নতুন করে তারা বেকার হয়ে বসে আছেন। এটিআরসিএ সেপ্টেম্বরে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অক্টোবর মাসেও আমাদের ভেরিফিকেশন শুরু হয়নি। আমরা দ্রুত ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে চ’ড়ান্ত সুপারিশের অপেক্ষায় আছি।
যদিও এনটিআরসিএ বলছে, পুলিশি প্রতিবেদনের কাজ শুরু না হওয়ায় চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। চাকরীপ্রত্যাশী এরশাদুর রহমান মন্ডল বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৮ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ দিতে ৬ মাস সময় লেগেছে। আমাদের মাত্র ৪ হাজার ৯২ জন। অথচ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থায় নিতে পারিনি কর্তৃপক্ষ। তবে খুব শিঘ্রই পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু হলে শিক্ষকদের সংশয় কেটে যাবে।
এর আগে ২০২১ সালে তৃতীয় গনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। তখন ৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশ করার কথা থাকলেও সুপারিশ করা হয় ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জন এবং নন-এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জন সুপারিশ পায়। আর ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পড়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি মহিলা কোটা পদে মহিলা প্রার্থী না থাকায় মোট ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফলাফল দেয়া সম্ভব হয়নি। সেকারণেই এই বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। যার মধ্যে - ভৌত বিজ্ঞান, আইসিটি, জীব বিজ্ঞান, ফিজিক্যাল ইডুকেশন ও কিছু নারী কোঠা রয়েছে। বিশেষ এই গনবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছেন ১৬তম নিবন্ধিত শিক্ষকরা। এর আগে এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে ৪র্থ গনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এ বছর ফেব্রোয়ারীতে প্রকাশ করা হয় বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি। নানা জটিলতায় এর চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো ঝুলে আছে।
এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেলে চ’ড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া হবে। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন তারা চ’ড়ান্ত সুপারিশ কবে পাবেন তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।